‘সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার!’ সত্যিই তাই। নানা নাটকীয়তা আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অহংকার। পদ্মার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেই স্বপ্নধারার, সেই সেতুর যাত্রা শুরুর এক বছর পূর্ণ হলো আজ।
দেশের দীর্ঘতম এই সেতুটি নির্মাণের স্বপ্ন প্রথম উঁকি দেয় ১৯৯৮ সালে, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর। পৌনে চার হাজার কোটি টাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুই সাহস জুগিয়েছিল পদ্মায় সেতু নির্মাণের। সেই বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেন- পদ্মায় সেতু নির্মাণ সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখতে। পানি প্রবাহের দিক থেকে আমাজনের পর পদ্মা নদীই বিশ্বে বৃহত্তম। সেই নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রেলপথও চালু হতে যাচ্ছে। এমনটিই জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলতে পারবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। দ্বিতল সেতুর আপারডেকে বা উপরতলায় চার লেনের সড়কপথ, লোয়ারডেক বা নিচতলায় থাকছে রেলপথ। গত ১০ জুন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প পরিদর্শনকালে জানিয়েছিলেন- সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা এবং আগামী বছরের জুনে ভাঙ্গা থেকে ট্রেন চলবে যশোর পর্যন্ত। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, বছরের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ সম্পন্নের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে।
গত বছরের ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিমালয় থেকে উৎপত্তির পর আড়াই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা পদ্মা নদী পানির সঙ্গে বিপুল পলি বয়ে আনে। ফলে নদীর তলদেশে নিয়মিত পরিবর্তন হয়। ভাঙনের কারণে ফেরিঘাট বারবার স্থানান্তর করতে হয়। পলির কারণে নির্দিষ্ট নৌরুট রক্ষা অসম্ভব। তাই ফেরি ব্যবস্থার উন্নয়নের পরিবর্তে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত আসে প্রাক সম্ভাব্যতায়। দুই যুগে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন এক বাস্তবের নাম। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। গড়ে উঠছে ব্যবসাবাণিজ্য। ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার পথ এখন চার ঘণ্টায় নেমেছে। অন্তত ১৯ জেলার মানুষ সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন কেবল একটি পদ্মা সেতু চালুর ফলে। কুয়াকাটা, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এখন পর্যটকরাও যেতে পারছেন অনায়াসে। কেবল নৌপথ নয়, আকাশপথের যাত্রীরাও এখন সড়কপথ বেছে নিয়েছেন এ সেতুর কারণে।
২০০৩ সালের ১৬ মে শুরু হয়ে ২০০৫ সালের মার্চে শেষ হয় পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায়। সমীক্ষার রেললাইন যুক্ত রাখার সুবিধাসহ ২৫ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রকল্প অনুমোদনের সময় সেতুতে রেল যুক্ত করার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেললাইন যুক্তের নির্দেশ দেন। ১৯৯৮ সালে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর এতে রেললাইন যুক্ত করা হয়। সেতুর এক পাশে রয়েছে সিঙ্গল লাইন রেলপথ। সে কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিনে ২৪টির বেশি ট্রেন চলতে পারে না। সেতুতে ফাটলের কারণে ট্রেন চলে ঘণ্টায় মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে। সমস্যা কাটাতে যমুনা সেতুর পাশে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
যমুনার অভিজ্ঞতায় নিচতলায় ট্রেন ও উপরতলায় গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা রেখে পদ্মায় দ্বিতল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ২০০৯ সালে। ২০০৭ সালে অনুমোদনের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। রেল সুবিধা যুক্ত করে ২০১১ সালে ডিপিপির প্রথম সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। রেলওয়ের প্রস্তাব ছিল- সেতুতে ডাবল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের। কিন্তু বিপুল ব্যয়ের নাগাল টানতে সিঙ্গল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুতে যাত্রীবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার এবং পণ্যবাহী ট্রেন ১২৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। ডুয়েল গেজ অর্থাৎ ব্রড গেজ ও মিটার গেজ- উভয় ধরনের ট্রেন চলাচলের সুবিধা থাকছে। পদ্মা রেল সেতুতে ডাবল স্টেক কনটেইনারবাহী ট্রেন চলতে পারবে।
যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু এবং কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগ থাকলেও বঙ্গবন্ধু সেতুতে পণ্যবাহী ওয়াগন (মালগাড়ি) চালানোর অনুমতি নেই ঝুঁকি থাকায়।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের পর ঢাকা-মোংলার সরাসরি রেল যোগযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতুতে কনটেইনারবাহী মালগাড়ি চলতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মতো মোংলাতেও ঢাকা থেকে সরাসরি রপ্তানিপণ্য পাঠানো যাবে। ভারতের সঙ্গে রেলপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল হবে।
পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজনের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল থেকে সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার রেলপথের ৭৩ কিলোমিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুতে পিলারের (খুঁটি) সংখ্যা ৪২টি; দুটি পিলার নদীর দুই তীরে, বাকি ৪০টি নদীর বুকে। পিলার নির্মাণে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার গভীর পাইলিং করা হয়েছে, যা বিশ^রেকর্ড। পদ্মা সেতুতে এখন দিনে গড়ে ২০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। দৈনিক গড়ে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা। গত বছরের ১ জুলাই থেকে গত ২২ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে টোল বাবদ ৭৮৯ কোটি ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকা আদায় হয়েছে। আগামী ৩০ জুন অর্থবছরের শেষ দিনে এ অংক ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একই সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হবে ৭০০ কোটি টাকার কম।
জাইকার অনুদানে ২০০৩ সালের ১৬ মে শুরু হয় পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ। জাইকার নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন কোইয়ি কোম্পানি লিমিটেড এ কাজ করে। তাদের সহযোগী ছিল কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট কনসালট্যান্ট (সিপিসি)। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০৩ সালে প্রতিদিন ৫৮ হাজার ২৮৫ যাত্রী পদ্মা পার হতেন। তাদের ৬২ শতাংশ পাটুরিয়া এবং ৩৮ শতাংশ মাওয়াঘাট হয়ে ফেরি পার হতেন। গড়ে ২ হাজার ৯০৯টি যানবাহন পার হতো সেই সময়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩৩টি মাওয়াঘাট হয়ে পার হতো। ২০২৫ সালে এই চিত্র বদলে ৪০ ভাগ যানবাহন মাওয়া, বাকি ৬০ ভাগ পাটুরিয়া ব্যবহার করবে। পাটুরিয়ায় ১৫৫ মিনিটে এবং মাওয়ায় ২০০ মিনিটে বাস ও যাত্রীবাহী ফেরি পার হতো। মাওয়া জাজিরায় সেতু হলে ২০১৫ সালে দৈনিক গড়ে ২১ হাজার ২৬০ এবং ২০২৫ সালে ৪১ হাজার ৫৫০টি যানবাহন পার হবে। পাটুরিয়ায় হবে ১৯ হাজার ৮৫০টি যানবাহন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের ২২ দিনের মাথায় এইকম নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে নকশা তৈরির পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আগের পরিকল্পনায় যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো পদ্মা সেতুতেও সড়কের পাশে রেলপথ রাখা হয়েছিল। কিন্তু যমুনার অভিজ্ঞতা স্বস্তিদায়ক না হওয়ায় নিচতলায় রেল ও উপরতলায় গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা রেখে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল যুক্ত করার নির্দেশ দেন। ২০০৯ সালের ১ জুলাই শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ।
২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ডিপিপির প্রথম সংশোধন করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্যও ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে প্রায় ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার হয়। যার মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু। বাকিটা ভায়াডাক্ট (সড়ক ও সেতুর সংযোগপথ)। এর মধ্যে ৫৩২ মিটার রেলের ভায়াডাক্ট।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১১ সালের এপ্রিলে বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ^ব্যাংক পরের বছরের ৩০ জুন চুক্তি বাতিল করে। সরে যায় সহ-অর্থায়নকারী জাইকা, এডিবি ও আইবিডব্লিউ। মালয়েশিয়ার সঙ্গে পিপিপি ভিত্তিতে সেতু নির্মাণে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত দেশটি পিছিয়ে যায়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদেও একই ঘোষণা দেন। এত বিশাল ব্যয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেতু নির্মাণ সম্ভব কিনা, এ সংশয়ের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন- দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের সামনে মাথা নত করবে না বাংলাদেশ। পরের বাজেটেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয় ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। তবে তারও আগে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে তিন দফা ডিপিপি সংশোধনী ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের জুনে সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলার প্রস্তুত হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুই পিলারের ওপর স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে প™§া সেতু বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। প্রাকৃতিক ও কারিগরি নানা চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবকটি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যুক্ত হয় নদীর দুই তীর। পরের দেড় বছরে বাকি সব কাজ শেষে ঐতিহাসিক প™§া সেতু ইতিহাস সৃষ্টি করে। গত বছরের ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সাধারণ মানুষের পারাপারের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়।
প্রায় এক বছর পর এসে সেতুটির মূল অবকাঠামোর নির্মাণব্যয় বাড়তে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সেতুটির নির্মাণব্যয় বাড়বে প্রায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন সেতুটির নির্মাণ শেষে বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ১৭ জুন চায়না মেজর ব্রিজের সঙ্গে সেতুটি নির্মাণে চুক্তি সই হয়। সেই সময় চুক্তিমূল্য ছিল ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৩ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে এক হাজার ৫২৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে অতিরিক্ত ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ব্যয় বাড়ছে ৪০৭ কোটি ৬৩ লাখ এবং নির্মাণব্যয় নিট বৃদ্ধি পেয়েছে এক হাজার ১১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সাতটি কারণে মূল সেতুর নির্মাণব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে ঠিকাদারের কাজ অতিরিক্ত ৪৩ মাস সময় বৃদ্ধিজনিত কারণে ১৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া মূল সেতুর ২২টি পাইল বৃদ্ধির কারণে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এর বাইরে ভূমিকম্পজনিত ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য ভায়াডাক্টের পাইলে স্কিন গ্রাউটিং করার জন্য ব্যয় বেড়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারের ফাউন্ডেশন প্ল্যাটফরম নির্মাণের জন্য ব্যয় বেড়েছে ৪০৭ কোটি টাকা। এসব হিসাবের বাইরেও মূল সেতুর কাজের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারের বিদেশ থেকে আমদানি করা বৃহৎ আকৃতির ক্রেন, হ্যামারগুলো প্রকল্প এলাকায় ৪৩ মাস অতিরিক্ত অবস্থান করেছে। ফলে যন্ত্রপাতির ভাড়া, ওয়েটিং চার্জ, ব্যবস্থাপনা খরচ ইত্যাদি কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রতিবছর টাকার তুলনায় ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে ঠিকাদারকে বৈদেশিক মুদ্রায় অতিরিক্ত ১০৫ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তদুপরি ভ্যাট ও আয়করের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।