‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচিকে ঘিরে বরিশালে বড় ধরনের শোডাউন ও বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কঠোর বার্তা দিতে চাইছে বিএনপি। দলটির সহযোগী তিন সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল চট্টগ্রাম ও বগুড়ার পর এবার বরিশাল বিভাগীয় শহরে একই কর্মসূচি আয়োজন করেছে।
আজ শনিবার বরিশাল শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশ সফল করতে তিনটি সংগঠনের শীর্ষনেতারা বরিশালে অবস্থান নিয়েছেন। তারা কয়েকদিন ধরে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচির সপক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে বরিশালের হিজলা উপজেলাসহ একাধিক স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। তার পরও ‘দেশ বাঁচাতে’ তরুণদের তথা নতুন ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করতে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির সহযোগী তিন সংগঠনের সমাবেশ আয়োজনের দিন বরিশালের রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, এদিন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরে শান্তি সমাবেশ করবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বৃহস্পতিবার বরিশালে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ২৪ জুন মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন এবং বিএনপি-জামায়েতের বিরুদ্ধে সতর্ক থেকে শান্তি সমাবেশ করতে বলেছেন। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও একই দিনে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, যুবলীগ চেয়ারম্যান স্থানীয় যুবলীগকে ২৪ জুন শান্তি সমাবেশ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী
লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি কোনোরূপ সহিংস কর্মকা- করে, তার কড়া জবাব দেওয়া হবে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম ও বগুড়াতে যে সমাবেশ করা হয়েছে, সেখানেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে পাল্টা সমাবেশের নামে ঝামেলা করেছে। মূলত সরকারবিরোধী কর্মসূচি আয়োজন করলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গায়ে পড়ে গ-গোল করছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেশ বাঁচাতে তাদের যে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’, তা তরুণ ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। চট্টগ্রাম ও বগুড়াতে অনুরূপ সমাবেশ করে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি বরিশালে বিপরীত কিছু ঘটবে না।
জুয়েল বলেন, দেশে সাড়ে ৪ কোটি ভোটার বেড়েছে, তরুণ এই ভোটাররা গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে তরুণেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্র ও দেশের কথা চিন্তা করে যুব ও তরুণরা এগিয়ে এগিয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের তারুণ্য সমাবেশে দেখে আওয়ামী লীগের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে তারা পাল্টা সমাবেশের নামে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
শনিবার বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ এবং একই সময়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বরিশাল নগরী। যদিও উভয় দলের কর্মসূচিকে ঘিরে নগরীতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৮শ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে, যাতে করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। এ ছাড়া উভয় দলের পক্ষ থেকে শান্তি বজায় রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।