বিভেদ ভুলে ষড়যন্ত্র মোকাবিলার নির্দেশ

Slider রাজনীতি


দলীয় বিভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তিনি বলেছেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটা গোষ্ঠী বাংলাদেশকে দমিয়ে দিতে চায়; কিন্তু তিনি দমে যেতে চান না, সবকিছু মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে চান। এ জন্য দলীয় বিভেদ, অভিমান ও অভিযোগ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠকটি শুরু হয় গতকাল সকালে; চলে বিকাল পর্যন্ত। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে জানান, দলীয় সভা-সমাবেশে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের ‘দুষ্পকর্ম’ তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আপাতত জেলায়-উপজেলায় সম্মেলন না করে সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে

কারা মনোনয়ন পাবেন- তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন, বিতর্কিতদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

রীতি অনুযায়ী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের এবং আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। সামনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ১২টি ইস্যু নিয়ে কথা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- শোক প্রস্তাব, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট শোক দিবস, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যবার্ষিকী ও ২৭ আগস্ট কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী।

শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর আট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এর পর জাঁকজমকভাবে ২৩ জুন দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও আগস্ট মাসের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়।

দলের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা আমাদের সময়কে বলেন, বৈঠকে সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরতেই অনেক সময় চলে যায়। এসব প্রতিবেদন পেশ করার পর মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা হয়। তখন এই ইস্যুতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন কথা বলেন। তাদের বক্তব্যে নিজের অভিমত জানান কেন্দ্রীয় সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী। এ সময় মাদারীপুর জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একে অন্যকে ইঙ্গিত করে কথা বলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রভাবশালী নেতার অভাব নেই; কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যখন মাদারীপুরে ভাঙচুর করে, তখন তাদের রুখে দেওয়ার লোক থাকে না।

এ সময় তৃণমূলে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। নিজেদের মধ্যে এই অভিমান, ক্ষোভ ও কোন্দলে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য তারানা হামিলসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন বলে জানা গেছে।

এ সময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জানান, তৃণমূল হলো আওয়ামী লীগের প্রাণ। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সভা-সমাবেশসহ দলের সব আয়োজনে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং দলের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের যে অভ্যুতপূর্ব সাফল্য আছে, তা প্রচার করতে হবে। জনগণের সামনে তথ্যপ্রমাণসহ তুলে ধরতে হবে বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কর্মও।

আলোচনার এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, সামনে নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে দলীয় সম্মেলন করার দরকার নেই। দলে আর কোনো বিভেদ নয়, প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধতা। ঐক্যবদ্ধভাবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি জানিয়ে দেন- যাদের জনভিত্তি নেই, দলের প্রতি আনুগত্য কম এবং যারা বিতর্কিত কর্মকা-ে যুক্ত, তাদের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য দলীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। এই বিষয়টির দিকেই সবার ফোকাস ছিল। যে কারণে সারাদেশ থেকে আসা অভিযোগগুলো ধরে কথা বলা হয়নি। হয়তো সামনের কোনো বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হবে।’

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ২৮ মিনিট কথা বলেন। তিনি বরিশাল, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ হতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *