আসন্ন ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের জন্য সরকারের কাছে অতিরিক্ত এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা সহায়তা চায় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। নিটওয়্যার কারখানা মালিক সমিতির দাবি, আর্থিক সহায়তা না পেলে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া নিয়ে মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে রপ্তানি খাত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে বিকেএমইএ এ চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ^ অর্থনীতি স্থবির। দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার সংগ্রামে কঠিন সময় পার করছে রপ্তানি খাত। মন্দার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত কার্যাদেশ পাচ্ছে না। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্যাপাসিটি নিয়ে চলছে উৎপাদন। ফলে মাস শেষে শ্রমিকদের বেতনের টাকাই উঠছে না। এ
ছাড়া রপ্তানি টাকা সঠিকভাবে পরিশোধ করছে না ক্রেতাগোষ্ঠী। এ মাসে বেতন-বোনাসের বিশাল চাপ রয়েছে। চিঠিতে সময়টা খুবই স্পর্শকাতর উল্লেখ করে বলা হয়, যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে না পারলে অনাকাক্সিক্ষত শ্রমিক অসন্তোষ ঘটে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগের বিশেষ সহায়তা ছাড়া এ চাপ সামলে ওঠা খুবই কঠিন।
বিকেএমইএ আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরের চতুর্থ কিস্তির ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে বলে জানতে পেরেছে বিএকএমইএ। কিন্তু চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ টাকা অপ্রতুল। ঈদুল আজহার আগেই এ খাতের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দরকার। তা না হলে শ্রমিক নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে পারে রপ্তানি খাত। এজন্য ২০ জুনের মধ্যে অতিরিক্ত ১ হাজার ৬০০ কোটি ছাড় করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে বিকেএমইএ।
যদিও ঈদের ছুটির আগেই শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বোনাস এবং জুনের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা রয়েছে। সেখানে গত মে মাসের বেতনই পরিশোধ করেনি শিল্প অধ্যুষিত এলাকার ২৩ শতাংশ কারখানা। দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকা রয়েছে মোট আটটি- আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেট। এসব এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৯১৫টি। শনিবার পর্যন্ত কারখানাগুলো ৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেতন পরিশোধ করেছে। বাকি ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কারখানা এখনো তাদের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।
শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে মে মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৩১৩। এর মধ্যে পোশাকপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ২৮১টি কারখানায় বেতন বকেয়া। পোশাক খাতের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ সদস্যদের বেতন বকেয়া থাকা কারখানার সংখ্যা ১৬৮টি। সুতা ও কাপড় উৎপাদনকারী বস্ত্র খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য ১০৬টি কারখানার শ্রমিকদের মে মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত ১২টি কারখানায়ও এখনো গত মাসের বেতন দেওয়া হয়নি।
শিল্প অধ্যুষিত আট এলাকায় পাটকল রয়েছে মোট ৯০টি। এর মধ্যে মে মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা ছয়। শিল্প এলাকাগুলোয় কোনো সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের আওতায় নেই এমন কারখানা আছে ৬ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে বেতন পরিশোধ হয়নি ২ হাজার ৩১৩টি কারখানায়।