জুয়েলার্স, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণ চুরি করে প্রতি ভরি মাত্র ৩৫-৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করত একটি চক্র। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গত ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানার ১০০ ফুট রোডের মাদানী এভিনিউয়ের হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সে চুরি হয়। এ চুরির ঘটনায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে চুরি হওয়া দুই ভরি স্বর্ণ, ১২ লাখ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, তিনটি বিএমডব্লিউ ছাতা জব্দ করা হয়।
উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারা হলেন মো. শরীফ ওরফে জামাই শরীফ, মো. আমির হোসেন ওরফে মোটা আমির, মো. ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা ওরফে কানা মোটা ইয়াছিন, মো. ফারুক, মো. নুরে আলম সুমন ওরফে ডিবি সুমন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোকাররম হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনু ও মো. পারভেজ।
গ্রেপ্তার হওয়া আট আসামি ও জব্দ হওয়া জিনিসপত্র
তিনি বলেন, গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে মাদানী এভিনিউয়ের হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীরা দোকানে তালা দিয়ে পাশে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য যান। নামাজ শেষে জুয়েলার্সে এসে দেখেন, দোকানের কলাপসিবল গেট ও শাটারে দেওয়া তালাগুলো কাটা। পরে মালিকসহ দোকানের কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বক্সগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং দোকানের ট্রেতে রাখা কোনো স্বর্ণালংকার নেই।
ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, তারা হিসাব-নিকাশ করে দেখতে পান, প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা ৫০ হাজার টাকা তালা কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে চোররা। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা (৩৩) করেন জুয়েলার্স মালিক।
মশিউর বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ জোনাল টিম মামলাটি প্রায় দুই মাস তদন্ত করে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে ১৩ জন আসামিকে শনাক্ত করে। বিভিন্ন মাদক, অনলাইন/ অফলাইন জুয়া এবং অন্য অসামাজিক কার্যকলাপে আসক্ত ভাসমান এই চোরদের ১৪ জুন কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সর্দারসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আসামিরা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যায়, কখন কতক্ষণ অবস্থান করেন তা-ও পর্যবেক্ষণ করেন। অপরাধ সংগঠনের দিন মালিক/কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান বাইরে থাকাকালীন চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গাতে অবস্থান নিয়ে কখনো ছাতা, কখনো চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল করে।
মশিউর রহমান বলেন, পরে কাটার দিয়ে মুহূর্তেই কলাপসিবল ও শাটারের তালা কেটে কয়েকজনকে ভেতরে ঢুকিয়ে শাটার বন্ধ করে দেয়। ভেতর থেকে চুরির কর্ম শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি অব্যাহত রাখে। নির্দিষ্ট কিছু দোকানদারের কাছে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা
তিনি বলেন, ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এই চক্রের সদস্যরা সব রকমের প্রযুক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে বিধায় তাদের সহসা ধরা যায় না। জুয়া খেলা, মাদক এবং যৌনতায় আসক্ত হওয়ায় চুরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের কাছে বেশি সময় থাকে না।
তিনি আরও বলেন, চক্রটি চুরি করা স্বর্ণ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভরিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। এসব চোরাই স্বর্ণ তারা রাজধানীর তাঁতিবাজার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। কোনো কিছু না দেখেই তাদের কাছ থেকে কম দামে এসব স্বর্ণ কিনে নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। নূর জুয়েলার্সসহ এসব চুরির ঘটনায় তাদের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়। আর নূর জুয়েলার্সের চুরির স্বর্ণ তারা প্রত্যেকেই দুই ভরি করে নেন।
গ্রেপ্তারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত কি না এবং এরই মধ্যে আরও কতগুলো অপরাধ করেছে, কারা কারা জড়িত ছিল, কোথায় চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে বলেও জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।