সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেখেন জনগণ আপনাদের কী করে।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশটাকে স্বাধীন করেছি। কিন্তু সেই দেশে এখন কথা বলার নেই অধিকার নেই, নিরাপত্তা নেই।’
মঙ্গলবার (১৩ জুন) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ পদযাত্রা করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাড়া আসুন না রাস্তায়। দেখবেন কার কত সাহস। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, দেখবেন কার কত সাহস আর শক্তি। জনগণ আপনাদের কী করে।’
সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানে মানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। নইলে পালাবার পথটুকুও পাবেন না। এখন তো আবার আমেরিকা আপনাদের পালাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল। এখন গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে একের অধিক মামলা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকারে একটাই কাজ- জনগণের পকেট কাটা। এমন একটা জিনিস নেই সেখান থেকে সরকার পকেট কাটে না। মোবাইল থেকে তারা পকেট কেটে নেয়। বিদ্যুতের কার্ডে ১০০০ টাকা ঢুকালে দেখবেন ৩০০ টাকা নেই। বছরে আমাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।’
‘সরকার এখন বলে কয়লা নাই, গ্যাস নেই, কেন ভাই? টাকা তো আগে নিয়ে নিসো। টাকা কই গেলো? সব পাচার করেছো,’ বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দায় পড়ে গেছে। তাই তারা পাচার করা টাকার ফিরিয়ে আনছে। আবার সেই টাকায় আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ দিতে হচ্ছে। এখন টাকা পাচারকারীদের পুরস্কার দেয়া শুরু হয়েছে। এখন চুরি করেও পুরস্কার পাওয়া যায়।’
সাংবাদিকরা মন খুলে কিছু বলতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিডিয়ার ওপর খড়গ বসে আছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের গলাবাজি শেষ হয় না।’
‘এদেশটা কারো একার নয়, এটা আপনার আমার সবার দেশ’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবাই মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশটাকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু এখন দেশে কথা বলার কোনো অধিকার নেই, নিরাপত্তা নেই।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কি চেয়েছিলেন বরিশালের মেয়র প্রার্থী মারা যাক? ধিক্কার জানাই তার এমন কথায়।’
ফখরুল বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ তাকে মৃত্যুর পর সম্মান পর্যন্ত দিলো না। একটি শোকবার্তা দেয়নি এই সরকার। কারণ তিনি এদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এদের তৈরি রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময় এই রক্ষীবাহিনী ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে হাতে নিয়ে সব কূটকৌশল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করলো। কারণ তারা বুঝতে পারলো, নির্বাচনে গেলে জনগণ তাদেরকে ভোট দিবে না। কারণ তারা ভালো কিছু করেনি। এই ভয়ে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে, জামিনের ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানছে না। আমাদের সবাইকে গ্রেফতার করলেও আন্দোলন বন্ধ হবে? হবে না।’
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।