বর্জ্য নিয়ে দুর্ভোগের অন্ত নেই গাজীপুরবাসীর

Slider গ্রাম বাংলা


দেশের অন্যতম শিল্পনগরী গাজীপুর। এখানকার কলকারখানায় কাজ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অসংখ্য শ্রমিক। বহিরাগত আর স্থানীয় মিলে কয়েক লাখ লোকের বসবাস গাজীপুর নগরীতে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার হতে চললেও এখনো গড়ে ওঠেনি ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন। ফলে রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে পড়ে থাকে আবর্জনার স্তূপ। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে দমবন্ধ হয়ে আসে নগরবাসীর। এ দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী তাদের।

নগরীর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কড্ডা এলাকায় বর্জ্য ফেলার স্থানটি এখন ‘ময়লার পাহাড়ে’ পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের নাকেমুখে রুমাল চেপে ওই স্থানটি পার হতে হয়। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। এ ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ তারা। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর ধরে।

এদিকে নগরীর টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়ালসড়কের মুখে নিমতলী ব্রিজের পাশে এবং টঙ্গী বাজার, বড়বাড়ি, কুনিয়া তারগাছ ও কড্ডা এলাকায় মূল সড়কের পাশে আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। এ ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলি সয়লাব ময়লা-আবর্জনায়। সিটি করপোরেশনই এসব খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখে আবর্জনা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিজেই নদী তথা পরিবেশদূষণ করছে। খোলা জায়গায় সিটি করপোরেশনের এসব ময়লার শেষ ঠিকানা নদী ও জলাধার। অর্থাৎ আমরা শুনেছি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অনেক প্রকল্প হবে। কিন্তু ১০ বছরে কিছুই দৃশ্যমান হয়নি। শুধু তারা জায়গাই খুঁজছে।

গাজীপুর সরকারি রানী বিলাশ মনি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মবিন মিয়া বলেন, সড়কে চলতে গেলে বর্জ্যরে দুর্গন্ধ পোহাতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে এমন দুর্ভোগ পোহালেও কেউ তো সমাধান করছে না। আমরা পরিচ্ছন্ন নগর চাই।

বিলাশপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লা-আবর্জনা আনার জন্য ঘরপ্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হয়। তারা সেগুলো কড্ডা এলাকায় নিয়ে ফেলে দেয়। অনেক সময় দুই-তিন দিনেও সে ময়লা অপসারণ হয় না। সে সময় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

গাজীপুর শহরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাসাবাড়ি, দোকানপাট কিংবা শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে অন্তত ৭০টি ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা প্রয়োজন। অথচ একটিও নেই। আমরা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পাচ্ছি না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য নিয়ে কাজ করার যেই দক্ষতা, লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার, সেগুলো আমাদের এখনো হয়নি। পাশাপাশি আমাদের ডাম্পিং স্টেশনও নেই। এরই মধ্যে দুটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ময়লা ফেলার সাব-স্টেশনের জন্য ৫ কাঠা করে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নতুন নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। তিনি বলেন, নগরের বর্জ্যগুলো এখন এক নম্বর সমস্যা। আমার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নানা উদ্যোগ নিয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন করে এ সমস্যা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করব। সরকারি সহায়তা নিয়ে এ বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষের পথে। অধিগ্রহণ শেষ হলেই কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে নগরীর মেঘডুবি এলাকায় পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া করপোরেশনের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। জায়গা কেনার চেষ্টা চলছে। স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তোলার জন্য মহানগরের ইটাহাটা, মজলিশপুর ও কাউলতিয়া এলাকায় ৩৩ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য দিয়ে জৈবসার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বর্তমানে এ সিটিতে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টন বর্জ্য জমা হচ্ছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়। বাকি বর্জ্যগুলো বিভিন্ন সড়কের পাশে কিংবা আনাচে-কানাচে পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *