বেশ কিছুদিন ধরে দেশজুড়ে বইছে তীব্র দাবদাহ। ভ্যাপসা গরমে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, তখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দেশের বেশির ভাগ এলাকায় চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসগুলো। ফলে লোডশেডিং বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও শোচনীয়। যেন অবস্থাটা এমন- ‘বিদ্যুৎ যায় না, মাঝেমধ্যে আসে।’ এর ফলে অতিষ্ঠ হয়ে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গভীর রাতে একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তারা ঘুমাতে পারছে না। গরমে জ্বর, ডায়নিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার উৎপাদন। চার্জার ফ্যান, আইপিএস ও সোলার প্যানেলের চাহিদার সঙ্গে বেড়ে গেছে দামও। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-
গাজীপুর : রাজধানীর লাগোয়া এ জেলায় গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ও ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ ২-এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা করে আসছে। কয়েক লাখ গ্রাহকের পাশাপাশি শিল্পকারখানাও আছে কয়েক হাজার।
সংশ্লিষ্ট বিতরণ সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ ১-এর বর্তমানে ৪৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে গতকাল পাওয়া যায় ২১০ মেগাওয়াট, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ ২-এ ১৬০ মেগাওয়াটের বিপরীতে পাওয়া যায় ৮৫ মেগাওয়াট, আর ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাওনা জোনাল অফিসের আওতাধীন এলাকায় ১০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ মেগাওয়াট। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অর্ধেক চাহিদা পূরণ করলেও বাকি অর্ধেক সময় লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা করে যাচ্ছে।
গাজীপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের জন্য মানুষের হাহাকার বাড়ছে। শহরের বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে লোডশেডিংয়ের জন্য স্বাভাবিক কাজেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও বিদ্যুৎনির্ভর শিল্পগুলোতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আসিফ ইলেকট্রনিক্স। পাইকারি মালামাল সরবরাহ করেন তারা। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক আবুল কাশেম জানান, লোডশেডিংয়ের জন্য হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে চার্জার ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম। পাইকারদের পাশাপাশি অনেক খুচরা বিক্রেতা এসব পণ্য সংগ্রহ করতে নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি।
গাজীপুরের নোমান উইভিং কারখানার শ্রমিক খাদিজা আক্তার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের ভয়াবহ অবস্থা। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পর রাতের ঘুমও কেড়ে নিয়েছে লোডশেডিং।
নরসিংদী : দিনে বিদ্যুৎ থাকছে না চার থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত। বন্ধ থাকছে কারখানার মেশিন। মালিকদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরাও। সেই সঙ্গে বাসায়ও বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে অস্থির সময় পার করছেন সাধারণ মানুষ।
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোমেন মোল্লা বলেন, জেলার প্রায় ১২ হাজার শিল্প কারখানার উৎপাদন কমেছে ৩০ শতাংশ। যারা জেনারেটর দিয়ে মেশিন চালাচ্ছেন তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
কারখানা মালিকরা জানান, প্রতি ইউনিটে বিদ্যুৎ বিল আসে ১০ টাকা, আর জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন কাজ চালালে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ২০ টাকা। লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে জেলার প্রায় ৫ লাখ শ্রমিকও। উৎপাদন কমে যাওয়ায় তাদের আয় কমেছে ৪০ শতাংশ। শ্রমিকরা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। এতে কমছে আয়-রোজগার।
শরীয়তপুর : তীব্র দাবদাহের মধ্যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রায় দুই মাস ধরে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহরে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা আর অন্য উপজেলাগুলোতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
গরমে শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তি বাড়ছে। অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকলেও ভোল্টেজ খুব কম। বাসাবাড়ির ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংসসহ রান্না করা খাবার নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
ভেদরগঞ্জের সাজনপুর গ্রামের বাসিন্দা রহমত হোসেন ও শিমুল বেগম বলেন, এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিলে ২-৩ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। এ ছাড়া বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার জ্বলে গেলে অভিযোগ দেওয়ার পরও ঠিক করতে লোক আসে না। আসলে আবার নানান খরচ চায়।
শরীয়তপুর পৌরসভার গ্রাহক ওয়াদুদ, স্বপন, খোকন বলেন, তীব্র গরমের কারণে এমনিতেই খুব খারাপ অবস্থা। তার ওপর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আলতাপ হোসেন বলেন, তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে, সে অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার কারণেও লোডশেডিং হচ্ছে। এটা জাতীয় সমস্যা।
ওজোপাডিকো শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন বলেন, লোডশেডিং নিয়ে আমাদের করার কিছু নেই। এটি উপরমহলের বিষয়।
মুন্সীগঞ্জ : ঘন ঘন লোডশেডিং আর তীব্র তাপদাহ অতিষ্ঠ করে তুলেছে জনজীবন। জেলাজুড়ে দিনে-রাতে মিলে প্রায় ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
মুন্সীগঞ্জ শহরের আবদুর রহিম বলেন, এক রাতে ৫ থেকে ৬ বার কারেন্ট চলে যায়। মানুষ রাতে ঘুমিয়ে দিনে কাজ করে। এখন কোনোটাই হচ্ছে না। কারেন্ট গেলে মশারি টানিয়ে ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার বের হলে মশার যন্ত্রণা। কীভাবে জীবনযাপন করছি বলে বোঝানো যাবে না।
শহরের মোল্লারচর এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার সুমি বলেন, দিন-রাতে মিলে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ যায়। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি। আমার ছোট বাচ্চা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
শ্রীপল্লি এলাকার সামসুল হক সরকার বলেন, বিদ্যুতের যন্ত্রণায় রাতভর ঘুম নেই। দোকানদাররা চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ।
মুন্সীগঞ্জ সদর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম এনামুল হক বলেন, এটি জাতীয় সমস্যা। জেলায় ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১০০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : তীব্র গরমে দিনে-রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে হাঁসফাঁস করছে রাঙ্গুনিয়ার মানুষ। সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ের কারণে পড়াশোনা করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাতের লোডশেডিংয়ের কারণে নির্ঘুম রাত কাটছে সাধারণ মানুষের।
সরফভাটা এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, দিনে ৪-৫ ঘণ্টা ও রাতে গড়ে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। জীবন অতিষ্ঠ, ব্যবসাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী বেশি। শিশুরা বেশি হারে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো গ্যাস পাই না। গ্যাস নিতে দীর্ঘ লাইন ধরে বসে থাকতে হয়। এভাবে বসে থাকলে গাড়ি চালাব কখন?
রাঙ্গুনিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জুয়েল দাশ বলেন, গত ১৫ দিন ধরে দিনে-রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ২১ থেকে বেড়ে ২৭ মেগাওয়াট হলেও বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট। আপাতত বরাদ্দ বাড়ারও সুযোগ নেই। তাই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
ঝালকাঠি : লোডশেডিংয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ঝালকাঠিবাসী। বিশেষ করে অফিস-আদালত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। শহরের মা ডেন্টাল কেয়ারের পরিচালক জামাল খান বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ করতে না পারায় আয়-উপার্জন বন্ধ হতে চলেছে। রোগীরা এসে ফেরত যাচ্ছেন।
ঝালকাঠি ওজোপাডিকো নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম জানান, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় ঝালকাঠিতে এর প্রভাব পড়েছে। এর আগে জাতীয় গ্রিড থেকে ২ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে বলত। এখন ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
ফেনী : তীব্র দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত এক মাস ধরে বেড়েছে লোডশেডিং। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ যায়। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ জনগণ, হাসপাতালের রোগী ও শিক্ষার্থীরা।
ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার ফজলুর রহমান জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ১১০ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। পাচ্ছেন ৬০ মেগাওয়াট। যার কারণে প্রতিদিন ১২-১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
সদর উপজেলা ধলিয়া ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক ইসমাইল হোসেন জানান, দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং। রাতে ঘুমাতে পারি না। গরমে ঘরে টিকে থাকা দায়, রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (অপারেশন) আকাস কুসুম বডুয়া জানান, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। যার ফলে মানুষ দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ শাখা ১-এর আওতাভুক্ত এলাকায় দিনের বেলা বিদ্যুতের চাহিদা ২০ থেকে ২৪ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যার পর চাহিদা ২৫ মেগাওয়াটের মতো। বরাদ্দ কম পাওয়ায় বর্তমানে দিনের বেলা প্রায় ৯ মেগাওয়াট এবং রাতের বেলায় ঘাটতি থাকছে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে প্রতি এক ঘণ্টা পর পর এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এ ছাড়া জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের দিনের বেলায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১০০ থেকে ১১০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা বাড়তে থাকে। যা প্রায় দেড়শ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। এ সময়ে ঘাটতি থাকে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট মতো। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরা রহমান জোনাকী জানান, কয়েকদিন ধরে গরমের সঙ্গে লোডশেডিং বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ভোররাতেও লোডশেডিং হয় এখন।
শহরের কোর্ট রোড এলাকার স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউসের পরিচালক সুমন সাহা জানান, লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়। ক্রেতারা দোকানে এসে গরমের কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেন না। অনেক ক্রেতা কাপড় না নিয়েই দোকান থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ শাখা ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আক্তার হোসেন বলেন, গরম বাড়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বাড়েনি। ফলে সব সময় চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ : বেশকিছু দিন ধরে চলছে তীব্র দাবদাহ। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। অসহ্য গরমের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ নেসকো লি. বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অশীথ পোদ্দার আমাদের সময়কে বলেন, সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ পাচ্ছি ২৪-২৫ মেগাওয়াট। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি।
জানপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, দেশে নাকি এত উন্নয়ন, তাহলে দিনে একটানা তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ কেন পাই না? দিনে দোকান করতে পারি না অসহ্য গরমে। আর রাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বাইরে ঘোরাফেরা করে সময় কাটাই।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর এলাকা। উল্লাপাড়ায় ২২টি বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিডার লাইন রয়েছে। ওইসব লাইনে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ফিডারে গড়ে ১২ বার লোডশেডিং দেওয়া হয়। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রচ- গরমে শিশু-বৃদ্ধাসহ নাকাল সর্বস্তরের মানুষ। একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে আইপিএস অথবা সোলার প্যানেল ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। লোডশেডিং আর গ্রাহকের ভিড় দেখেই দোকানিরা আইপিএসের মূল্য ২ হাজার টাকা ও সোলার প্যানেলের মূল্য ৮শ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছেন।