সরকারের কারণে বাংলাদেশের ওপর গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাপ দিচ্ছে: ফখরুল

Slider রাজনীতি


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশের ওপর গণতান্ত্রিক বিশ্ব নানা চাপ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য তারা (সরকার) বাংলাদেশের রাষ্ট্রের মানুষে যে আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ তার সব কিছু তারা চুরমার করে দিয়েছে। যার ফলে কি হয়েছে আমরা সব জানি। আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি দেয়, নিষেধাজ্ঞা দেয়- এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের কথা নয়, লজ্জার কথা- যে আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আজকে আমাদের ওপরে আরেকটা দেশ থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কেন? কারণ এই আওয়ামী লীগ, এই আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার আজকে দেশকে এমন জায়গা নিয়ে গেছে তাদের দুঃশাসনের কারণে, তাদের দুর্বৃত্তায়নের কারণে, তাদের লুটের কারণে যে আজকে একটা এই ধরনের ব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্রে ফিরে আসার আর কোনো পথ আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক বিশ্ব দেখতে পারছে না।’

জনগণকে জাগিয়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন একটাই পথ আবার জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে, যেভাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব জাগিয়ে তুলেছিলেন মানুষকে যুদ্ধের জন্য, যেভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রামে-গঞ্জে চারণ কবির মতো গান গেয়ে মানুষকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নামিয়েছিলেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সেই একইভাবে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বিদেশ থেকে যিনি ১০ দফা দিয়েছেন, ২৭ দফা দিয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সেই দাবিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে সংগঠিত করে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করে গণতন্ত্রকে এখানে আবার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তাকে এখানে প্রাতিষ্ঠিক রূপ দেওয়ার জন্য গনতন্ত্র মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে একটা সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এই শাহাদাতবার্ষিকীকে এই হোক শপথ।’

বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনে জিয়াউর রহমানের দর্শন তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তার যে আরাধ্য ছিল, তিনি যে চেয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন যে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবেন এবং সে জন্য শত শত মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আজকে শত মানুষ গুম হয়ে গেছে, ৪০ লাখ মানুষ মিথ্যা মামলায় ভুগছে। আজকে সবার স্বার্থে আমাদেরকে ত্যাগ স্বীকার করে গণতন্ত্র ফেরানোর যুদ্ধে, এই সংগ্রামে জয়ী হতে হবে।’

‘জিয়াউর রহমানকে ছোট করে আপনাদের নেতাকে মহিমান্বিত করতে পারবেন না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের অবস্থায় জিয়াউর রহমান সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ বুঝে গিয়েছিল— জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন, তা ধ্রুবতারার মতো সত্য। যারা ইতিহাসকে মুছে দিতে চায়, তাতে করে আপনাদের নেতাকে মহিমান্বিত করতে পারবেন না। যার যে ঋণ, তাকে সেই প্রাপ্য দিন।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়ায় প্রতিটি নির্বাচনের আগে আমাদের লড়াই করতে হয়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্বে করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, সেলিনা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান ওমর বীরউত্তম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, তাহসিনা রুশদির লুনা, মজিবুর রহমান সারোয়ার, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *