তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে গত মে মাসে সার্বিক রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার বেশি। ২০২২ সালের মে মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৮৩ কোটি ২ লাখ ডলার। সে হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এদিকে মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে
প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৫৩ শতাংশ। শুধু মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। অর্জন হয়েছে ৪ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে আছে ১.৮৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মে) এই ১১ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২৬৩ কোটি ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ। পোশাক খাতের মধ্যে ওভেন ও নিটওয়্যার ভালো করলেও নেতিবাচক ধারায় রয়েছে হোম টেক্সটাইল। গেল ১১ মাসে ওভেন খাতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
তবে পোশাকের এই প্রবৃদ্ধিকে মানতে নারাজ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ ইজিম আমাদের সময়কে বলেন, গত বছরে অনেক অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়। সেই পণ্য এ বছর রপ্তানি হয়। এ কারণেই রপ্তানি আয় বেড়ে গেছে। কাগছে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাস্তবে ঠিক নেই। পোশাক খাত কঠিন সময় পার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা পূরণ হয়নি। মে মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫১২০ মিলিয়ন ডলার। আর রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৮৪৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পরিকল্পনা অনুসারে মে মাসে ১২০ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় কম হয়েছে।
এর আগের মাস এপ্রিলে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৫৬ মিলিয়ন বা ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ইউএস ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৩৮ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ ৭৮২ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার কম পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। শতাংশের হিসাবে যা ১৬.৫২ শতাংশ কম।
তার আগের মাস মার্চে রপ্তানি আয় ছিল ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলার। গত বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিমাণ কম পণ্য রপ্তানি হয়েছিল মার্চে।
তবে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় ছিল ইতিবাচক ধারায়। ওই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪৬৩ কোটি ১ লাখ ইউএস ডলারের পণ্য। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৯ কোটি ৪৫ লাখ ইউএস ডলার।
আর নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫১৩৬ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আগের বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪৮৫০ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। রপ্তানি বেড়েছিল ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
রপ্তানি বাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। তাতে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ২০২২ থেকে মে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১ মাসে বিশ্ববাজারে মোট ৫০৫২৭ দশমিক ২৪ অর্থাৎ ৫ হাজার ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ইউএস ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪৭১৭ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।
কিন্তু এ সময়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২৪৫৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৬ হাজার ২৪৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ ১৯০৬ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য বিশ্ববাজারে কম রপ্তানি হয়েছে।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি কম ছিল। অন্যদিকে গত মাসে রপ্তানি ভালো ছিল। এ ছাড়াও ঈদের আগে স্বাভাবিকভাবে রপ্তানি কম হয়। ঈদের পরে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে নানা সংকটের মধ্যেও পোশাক খাত রপ্তানির ধারা ধরে রেখেছে এটা ভালো দিক।