চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ক্লিপস প্রকাশের ইস্যু নিয়ে অবশেষে কথা বললেন তানজিন তিশা।
তিশা জানান, তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, যার দরুণ দেশে উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি পরে জেনেছেন। বুধবার রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমন কথা জানান অভিনেত্রী।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল, নাজিফা তুষি ও তানজিন তিশার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ক্লিপস আপলোড করা হয়। যা অন্তর্জালে ভাইরাল হয় এবং সেসব নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এই ইস্যু নিয়ে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন রাজ ও সুনেরাহ। দুজনেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এবার এ নিয়ে কথা বললেন তানজিন তিশা।
নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিশা লিখেছেন, ‘দুটি শো-তে অ্যাটেন্ড করার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে আমি আমেরিকাতে আছি। বাংলাদেশে যখন সকাল তখন এখানে গভীর রাত। এজন্য বাংলাদেশের খবরাখবর খুব বেশি জানি না আমি৷ আমাকে জড়িয়ে যে ঘটনাটা ঘটে গেছে, সেটি পরে আমি দেখেছি, জানতে পেরেছি।’
দুঃখ প্রকাশ করে অভিনেত্রী লিখেন, ‘এটা নিয়ে আমি বলতে চাই, স্যোশাল মিডিয়াতে আমার যে ভিডিও আপ করা হয়েছে সেটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত ভিডিও। ৬-৭ বছর আগে আমরা বন্ধুরা ফান করে ভিডিওটি করেছিলাম। যেহেতু এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও, তাই এটার এক্সপ্লেনেশন দেয়ার কিছু আছে বলে মনে করিনা। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবন আছে, পার্সোনালিটি আছে, ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে যেটাকে জাজ করার অধিকার অন্য কাউকে আমি দিতেও চাইনা। তাই আমার দর্শক ও অনুরাগীদের উদ্দেশ্য এতটুকুই বলব ৬-৭ বছর আগের সামান্য একটা ক্লিপ দিয়ে ব্যক্তি তানজিন তিশাকে জাজ করে ফেলবেন না, প্লিজ। আপনাদের ভালবাসা আর দোয়ায় আমি আজ এই পর্যন্ত এসেছি। আমার অভিনয় আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রাখবেন, আমি আমার অভিনয় দিয়েই আপনাদের কাছে বেঁচে থাকতে চাই সবসময়, প্রিয় হয়ে থাকতে চাই। যদিও আমি বলেছি আমার এই ঘটনা নিয়ে কাউকে এক্সপ্লেনেশন দিতে চাই না তবে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আর দর্শকদের যদি এই ঘটনা বিব্রত করে, কষ্ট দেয় আমি মন থেকেই দু:খ প্রকাশ করছি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘এই ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল, পত্রিকা, অনলাইন নিউজে, ফেসুবকে গ্রুপে, কমেন্টে বলা হচ্ছে/লেখা হচ্ছে ‘‘শরীফুল রাজের সঙ্গে তিশার আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’’। যথাযথ সম্মান নিয়েই আপনাদের বলছি, এই ভিডিওর মধ্যে শরীফুল রাজ কোথা থেকে এলো? কী গোপনীয়তা এখানে? তার ফেসবুক আইডি থেকে এটি প্রকাশ পেয়েছে বলেই কেন ভাবছেন সেখানে আমি তার সাথে আছি৷ ভিডিওতে আমি একা এবং সেটা কোন আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও না, বরং সেটা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের। সুতরাং ‘‘আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’’ শব্দগুলো কারেকশন করা উচিত। এটা বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক।’
অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন জানিয়ে তিশা আরও লিখেন, ‘একজন মানুষের প্রাইভেসি, হেম্পার করা, হ্যারেজমেন্ট করা বা পারসোনাল ভিডিও অনুমতি ছাড়া পাবলিকলি প্রকাশ করা, এটা বিগ ক্রাইম। সো যার আইডি বা যিনি এটি আপ করেছেন বাংলাদেশে ফিরে আমি তার বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে ইতিমধ্যেই অনেকই ধারণা করতে পারছেন, অনেকের মুখে মুখেও এটি শোনা যাচ্ছে কে বা কারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি এখানে কারোর নাম উল্লেখ করতে চাই না, আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান রেখে পদক্ষেপ নেব। সেই আইনই বলে দেবে কে বা কারা এই ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আমার সম্মান নষ্ট করেছে, কে বা কারা এই ভয়ংকর অপরাধে জড়িত।’
শরীফুল রাজের উদ্দেশ্যে অভিনেত্রী লিখেন, ‘রাজের আইডি থেকে ভিডিওগুলো আপ করা হয়েছে এবং রাজ তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে দু:খ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছে। শুধু দু:খ প্রকাশেই কেন ঘটনা শেষ করতে চাইছ রাজ? এই যে তোমাকে জড়িয়ে কয়েকটা মেয়ের সম্মান নষ্ট হলো, তাদের ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলল সবাই, পরিবারের সামনে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে, এত সিলি সিলি ক্যাপশন দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভিডিও গুলোকেও আপত্তিকর বানানো হলো, এই দায়ভার কী তোমার না? কারণ তুমিই তো বলেছ তোমার আইডি হ্যাক করা হয়েছে। তোমার দায়িত্বশীলতার জায়গায় তুমি কী করছ? কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছ না? কেন এর পিছনের মূল হোতাকে খুঁজে বের করছ না?’
সবশেষে তিনি জানান, যদিও দেশে এসেই আমি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব, তবুও রাজ আমি তোমার কাছ থেকে এতটুকু দায়িত্বশীল মনোভাব আশা করেছিলাম সত্যি। আসলে তানজিনা তিশা তার কাজ দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং কাজ নিয়েই এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছে দর্শকের মনে কাজ নিয়েই থেকে যেতে চায়। তাই দর্শকদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের তানজিন তিশা কে কাজের মাধ্যমেই বাঁচিয়ে রাখুন।