নির্বাচনের আগে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ মামলায় সাজা দেওয়া হবে, এমন তথ্য কানে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক আয়বর্হিভূত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও তার সহধর্মিনী সাবেরা আমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, যখন আর কোনো আশা থাকে না। তখন অনেকেই চেষ্টা করেন- কোনো রকমের কোনো কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকে বিরোধীদলের নেতাদের সাজা দেওয়ার এই যে রায়, এই রায় হচ্ছে তাদের সেই পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, সরিয়ে আবার যদি এককভাবে পার হওয়া।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই যে ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে তারা (সরকার) মাঠে নেমেছে কিছুদিন আগেও আমরা বলেছি এই কথাগুলো। আমাদের কানে এসেছে, প্রায় ১ হাজার ৩৫০ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের আগেই তারা শুনানি করে সব শেষ করে সাজা দিয়ে দেবে। তার সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা মামলা। প্রত্যেকটি মামলার আসামি হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধীদলের শীর্ষ নেতারা।’
তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (সরকার) অত্যন্ত চমৎকার উদ্দেশ্য। এদেরকে (বিরোধীদলের নেতাদের) যদি আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাদের কথা মতো এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না। সব সময় সেই সংবিধানের উল্লেখই তারা করছে যে সংবিধান তারা তৈরি করেছে, ১৯৭২ সালে সেই সংবিধান পরবর্তীকালে জনগণের যেটুকু অ্যামেন্ডমেন্ট হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে তারা নিজেরা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া করে তাদের মতো করে নিয়েছে সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা একদম একা খেলার মাঠে খেলবেন আর গোল দিয়ে যাবেন। যেটাকে আমরা বলি যে, প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে, এগুচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল আদালতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমি মনে করি এদেশের বিচার ব্যবস্থার কফিনে একটা পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয় ২০০৭ সালে, এতদিন ধরে এই মামলা চলে নাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হঠাৎ করে দেখা গেলো যে, দ্রুত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এখন অতি দ্রুত প্রতিদিন একজন-দুইজন-তিনজন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে এবং তাদের রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন আমাদের আইনজীবীরা ঢাকার কথা বলতে চেয়েছিলেন বিশেষ আদালতে তখন তাদেরকে সেখানে কথা শুধু বলতেই দেওয়া হয়নি তা নয়, তাদেরকে সরকারি দলের আইনজীবীরা আক্রমণ করেছে, তাদেরকে আহত করেছে এবং কি পুলিশ সেখানে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে তাদেরকে নির্যাতন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এরপরে আমরা কীভাবে বলব, এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে? এদেশে কীভাবে বলব যে, বিরোধীদলের এখানে রাজনীতি করার, মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার আছে?’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই সাজা দিয়ে আমাদের নেতাদেরকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।’ একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোহাম্মদ নাসিমের (প্রয়াত) মামলায় তাদেরকে আদালত খালাস দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর দক্ষিণের সদস্য রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এভাবে তারা (সরকার) মিথ্যা মামলা দায়ের করে গোটা দেশে ভয়-ত্রাস এবং একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তারা একই কায়দায় এককভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় যেটা এদেশের মানুষ এটা হতে দেবে না। এদেশের মানুষ তাদের বিতারণ করেই নির্বাচন করবে।’
তিনি বলেন, ‘জগনের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে- এই আন্দোলনকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে সরে যেতে হবে। পরাজিত হতে হবে এবং পরিষ্কার ভাষায় আবারও বলতে চাই, একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই আমরা বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে। এই সমস্ত খেলাধুলা বাদ দেন, এই সমস্ত মানুষকে প্রতারণা করবার পথ থেকে সরে গিয়ে, মানুষকে নির্যাতন করবার পথ থেকে সরে এসে সোজা পথ ধরেন, একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।