হালনাগাদ ভোটার লিস্টে দুই শতাধিক মৃত ব্যক্তি!

Slider জাতীয়


দুই শতাধিক মৃত ব্যক্তিকে তালিকায় রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, এক ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অন্য ওয়ার্ডে দেখিয়ে ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যা সংখ্যায় প্রায় হাজারখানেক। আর এসব অনিয়ম রেখেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভান্ডারিয়া উপজেলার সদর পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ- বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিয়ম থাকলেও নির্বাচন কার্যালয় থেকে কোনো ব্যক্তি কারও বাসা-বাড়িতে তথ্য সংগ্রহ করতে যাননি। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো সুরাহা পাননি। অভিযোগ উপেক্ষা করেই পুনরায় ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। উল্টো যারা অভিযোগ করেছেন, তারা যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ দিতে পারেনি বলে তাদের নামে চিঠি পাঠিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়। যদিও

আইন অনুযায়ী তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দায়িত্ব নিজ নিজ নির্বাচন কার্যালয়ের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১৫ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পুনর্বিন্যাস করা সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়। মাত্র ১০ কার্য দিবসের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য এক কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ারও নির্দেশ দেয় ইসি। নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চার কার্যদিবস পরই ২২ মে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে তা প্রকাশ করে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় এবং হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা ২৩ ও ২৪ মে অফিস চলাকালীন ভোটার তালিকা পুনর্বিনাসকারী কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করা হয়।

প্রকাশিত ভোটার তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে প্রায় দুইশ ভোটারের নাম রয়েছে, যারা অনেক আগেই মারা গেছেন। যাদের অনেকেরই ডেথ সার্টিফিকেট আমাদের সময়ের হাতে রয়েছে। এমন অনেকের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা অন্য এলাকার। চাকরি সুবাদে এক সময় ভান্ডারিয়া পৌরসভায় থাকলেও গত ৫ বছর ধরে তারা বদলি হয়ে অন্য জেলা বা বিভাগে চলে গেছেন; কিন্তু তাদের নামও হালনাগাাদ করা ভোটার তালিকায় রয়েছে।

জানা গেছে, ভোটার নং-৭৯০৫১২০০০১০০ ইলিয়াস খান, পিতা-আসমত আলী খান ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। ভোটার নং- ৭৯০৫১৬৮১৪৭৭৯ আব্দুল খালেক, পিতা-গফুর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট মারা গেছেন। একইভাবে ভোটার তালিকায় দোলোয়ার হোসেন, আব্দুল আজিজ সিকদার, আবুল হাশেম হাওলাদার, আব্দুল খালেক বেপারী, আব্দুর রব হাওলাদার, গাজী আফজাল হোসেন, মহব্বত আলী হাওলাদারসহ আরও অনেক মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে হালনাগাদ ভোটার তালিকায়। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি ভুল রয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকায়। এমন অনেক ভোটার রয়েছেন, যাদের নিজ ওয়ার্ডের পরিবর্তে অন্য ওয়ার্ডের ভোটার দেখিয়ে তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। শুধু ১ নম্বর ওয়ার্ডেই এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন অর্ধশতাধিক। সবমিলিয়ে দুইশর বেশি ভোটারকে এভাবে অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৮শ ভোটার রয়েছে, যারা ২০২১ সালের ২১ জুনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাশের শিয়ালকাঠী ইউনিয়নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাদেরও নতুন হালনাগাদ হওয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নতুন ভোটার তালিকা অনুযায়ী এই ৮ শতাধিক ভোটার ইউনিয়ন পরিষদে ভোট দিয়েছে, এখন পৌরসভায় পুনরায় ভোট দেবে! এ ছাড়া প্রায় ২০ হাজার ভোটারের এ তালিকায় অনেকে আছেন, যারা ভান্ডারিয়া পৌরসভায় বসবাস করেন। হয়তো আশপাশের উপজেলার বাসিন্দা। সব মিলিয়ে পৌরসভার হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম ও ভুলভ্রান্তি রয়েছে বলে দাবি ভান্ডারিয়া পৌরবাসীর।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- মূলত মাত্র ৪ দিনের মধ্যে পুরো পৌরসভার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে যাওয়াতেই এ ভুলভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা কারও ঘরবাড়িতে না গিয়েই অনেকটা আগের তালিকাকে হালনাগাদ হিসেবে প্রকাশ করে দিয়েছেন। ভুলভ্রান্তিতে ভরা এ হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা সংশোধন না করে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন আয়োজন করলে তাতে সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন ভান্ডারিয়া পৌরবাসী। যেহেতু ভোটার তালিকা প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী ২২ মে বিকালেই এসব অনিয়ম ও ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের আবেদন করেন অনেক ভুক্তভোগী। পৌরসভার ২০ ভোটারের পক্ষ থেকে মালিক মো. সওকত ইকবাল নামের এক স্থানীয় ভোটার লিখিতভাবে ওই দিনই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় বরাবর এসব ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ দাখিল করা হয়নি উল্লেখ করে এলাকাবাসীর করা সে আবেদন নাকচ করে ২৪ মে পাল্টা চিঠি ইস্যু করেন ভান্ডারিয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. নাজমুল হোসেন। ভোটার তালিকা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে না বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে মো. নাজমুল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ভোটার তালিকায় যদি মৃতদের নাম থাকে সেটা হালনাগাদ থেকেই বাদ দেওয়ার কথা। সেটা যদি না হয়ে থাকে তা হলে তার কিছু করার নেই। এখন তারা সীমানা অনুযায়ী ভোটার পুনর্বিন্যাস করেছেন। সেখানেও যদি কোনো মৃত ভোটার থাকে তাহলে তাকে বাদ দেওয়া যাবে; কিন্তু অভিযোগকারীরা তথ্য-প্রমাণসহ কিছু দিতে পারেনি বলে সেটা সম্ভব হয়নি।

মৃত ব্যক্তিদের ভোটার হালনাগাদ তালিকায় থাকার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। স্থানীয় ভোটাররা যদি ভোটার তালিকা নিয়ে কোনো অভিযোগ করে, তা হলে নির্বাচন কমিশনের উচিত নিজ উদ্যোগ ও খরচে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে খোঁজখবর নেওয়া। প্রয়োজনে ভোটার তালিকা পুনরায় হালনাগাদ করতে হবে। তথ্য-প্রমাণ ও দলিল দেওয়া জনগণের দায়িত্ব নয় বলেও মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। যেহেতু অসংখ্য গড়মিলের অভিযোগ উঠেছে, তাই ওই পৌরসভায় সংশোধিত নতুন ভোটার তালিকা না করা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *