টঙ্গী: বৃহসপতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি নির্বাচন। গাজীপুর সদরে ৪২টি ও টঙ্গীতে ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ভোটার প্রায় ১২ লাখ ও টঙ্গীতেই প্রায় ৪ লাখ ভোটার। মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশ ভোটার টঙ্গীতে হওয়ায় টঙ্গীর ভোটার একটি বড় ভোট ব্যাংক হয়ে গেছে। টঙ্গীতে দুইজন শক্তিশালী মেয়র প্রার্থী থাকায় টঙ্গীতে কেউ কোন কথা বলে না। সব জায়গায় থম থমে অবস্থা।
বুধবার টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় প্রচারণা বন্ধ থাকলেও কৌশলে প্রচারণা চলছে। তবে মাইকিং নেই। প্রার্থীরা নিজ নিজ বাসায় থেকে পোলিং এজেন্ট ও ভোটার তালিকা সরবরাহ সহ কর্মীদের সাথে দফায় দফায় সভা করছেন। মাঠে ময়দানে আজ প্রার্থীদের তেমনভাবে দেখা যায়নি। আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ও কখনো ফাাঁকা কখনো বা বন্ধ। সব কর্মী মাঠে চলে গেছে।
টঙ্গী স্টেশন রোডের অটোরিক্সা চালক আব্দুল হালিম জানান, তিনি বউ বাজার এলাকার ভোটার। কাকে ভোট দিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বললে সমস্যা আছে। তাই বলব না।
পান দোকানদার নিজাম উদ্দিন জানান, যিনি ভালো কাজ করবেন তাকেই ভোট দিব। ভোট ভালো হউক তা আমরা চাই।
ফুটপাতের দোকানদার সুজন মিয়া বলেন, আমাদের যে ভালো করবে তাকেই দিব। গন্ডগোলের খবর পেলে কেন্দ্রে যাব না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা নিয়ে গঠন করা হয়েছিল আয়তনে দেশের অন্যতম বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। বিগত দুই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পেছনে স্পষ্ট ছিল আঞ্চলিকতার ছাপ। দুই নির্বাচনেই বিজয়ী হয়েছেন গাজীপুর সদরের প্রার্থী। এবারও টঙ্গীর বাসিন্দা আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আগের দুই বারের মতো যদি এবারও আঞ্চলিকতার ইস্যু সামনে আসে তা হলে বেকায়দায় পড়তে পারেন ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থী। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগন নৌকায় ভোট দিবে আশা ক্ষমতাসীন দলের।
গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৪২নং ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১থেকে ১৩ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত সদর থানার আওতাভুক্ত। আর ৪৩ থেকে ৫৭নং ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত ১৪ থেকে ১৯ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত টঙ্গী থানার অধীন। টঙ্গীতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৭৩জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ২৮জন। গাজীপুর সদরে মোট ভোটার ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৩ জন, আর টঙ্গী থানার ভোটার ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬২০ জন।
দুই এলাকায় ভোটারের এই ব্যাপক পার্থক্য নির্বাচনে বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে- এমন নজিরও রয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান। আর পরেরবার নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম। তারা দুজনেই গাজীপুর সদরের বাসিন্দা। প্রথমবার টঙ্গীর বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ, পরেরবার টঙ্গীর বাসিন্দা হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিলে পরাজিত হয় বিএনপি। এবার আবারও আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আর গাজীপুর সদর থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।
গাজীপুর সদরের তুলনায় টঙ্গীতে ভোটার কম হলেও এই এলাকা থেকে এবার আজমত উল্লা খান ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক এক নেতার ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। টঙ্গী এলাকায় সরকার পরিবারের প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছেন এই প্রার্থী। ফলে তিনি টঙ্গীতে আজমতের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই তীব্র কোন্দল রয়েছে বলে মনে করেন ভোটাররা। তাদের মতে, নির্বাচন এলেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে নির্বাচনের দিন দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বেশিরভাগ ভোটার।
চাপ বেড়েছে বিএনপির ওপরও:
: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বয়কট করলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযানের খবর প্রায় প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বহু বিএনপি কর্মী। আতঙ্ক ভর করেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর। তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে মহানগরের সব থানায় অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মামলা বা অন্য বিষয় না থাকলে কোনো বিএনপির নেতাকর্মীর বাসায় অভিযানের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তেমন কোন সমস্যা নেই। কোন খবর পেলে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচছে সাথে সাথে।