ঢাকা: দীর্ঘ সাত মাস চারদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য (এমপি) পদ নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। তবে দলের সদস্য পদ বাতিলের পর সংসদ সচিবালয়য়ে স্পিকার বরাবর কোনো চিঠি না দেওয়ায় এমপি হিসেবে তার পূর্বের অবস্থান বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মূলত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তার ভাগ্য। দলের সিনিয়র এ সংসদ সদস্যের পদ খারিজ চেয়ে দলের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে। যে কারণে তার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। চিঠি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংসদ সচিবালয়ও।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাজেট অধিবেশন শেষে স্পিকার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি পেলে আমি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠাবো। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদ সচিবালয়ে জানানোর পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) এখনো আমার কাছে পূর্বের পরিচয়ে আছেন।
তবে লতিফ সিদ্দিকীর অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি জানান, আইনি ব্যাখ্যায় সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকলে অধিবেশনে যোগ দিতে আইনি বাধা নেই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর-২০১৪ নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে নবী করিম হযরত মোহাম্মদ (সা.), হজ ও তাবলীগ জামাত সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দেন লতিফ সিদ্দিকী। এরপর তাকে প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণ করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ ও সর্বশেষ দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ খারিজ চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই চিঠি পাঠানো হয়নি।
এসব প্রশ্নের উত্তরে স্পিকার জানান, সংসদে ট্রেজারি বেঞ্চের ১৪ নম্বর আসনটি লতিফ সিদ্দিকীর। এখনও তা রয়েছে। একই সারির শুরুতে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে দলের সদস্যপদ হারানোর পর তার সংসদ সদস্য পদ থাকছে কি না সে বিতর্কেরও অবসান হয়নি। কেননা এ ব্যাপারে সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হলে এ বিতর্কের অবসান হতো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংসদ সদস্য পদ শূন্য প্রসঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বালিত হবে’। তবে বহিষ্কার করা হলে কী হবে তা স্পষ্ট নেই, ফলে লতিফ এখনও এমপি ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘ সাত মাস চার দিন কারাভোগের পর সোমবার (২৯ জুন) জামিনে মুক্তি পান সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দীকি। এখন তার সংসদে যোগ দেওয়া না
দেওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা।