আমার ছোট ভাই কমরেড গ্রেট ম্যাসি ম্যাজিকে দু’ যুগ পর আর্জেন্টিনা সেমি ফাইনালে; ফলে মেজো ভাই হিশেবে অমার দায়িত্বটা বেড়ে গেলো। বড় ভাই ম্যারাডোনা যেমন ঘুমোতে পারছেন না ম্যাসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার বিরল আনন্দে, আমার অবস্থা ও তাই।
………………………………………………………………………………………… ………………………………………
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে আমাদের বারান্দায় আমার কাজিন, ভাগ্নে ভাগ্নি মিলে ৭/৮ জনের একটা গ্রুপ ফটো তুলেছিলাম কিছুদিন আগে। ফটোতে ওদের পোজ দেখে মনে হচ্ছিলো ওরা ব্রাজিলেই আছে, প্রত্যেকেই তারা মেসি- ডি মারিয়া। ভেবেছিলাম আজ ফটো সহ একটা পোস্ট দেবো। দূর্ভাগ্য আমার, ক্যামেরা অন্তর্বতিকালীন সময়ের জন্য হঠাৎই নাই হয়ে গেছে। গতকাল ব্রাজিলের খেলা দেখে অনেকেই আতঙ্কে আছেন, বিশেষ করে অন্ধ আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মধ্যে এই আতঙ্কটা বেশি। বিশ্বকাপ আসা মানেই নিউজ পোর্টাল ও নানা পত্রিকার খেলা ধূলার সংবাদেই চলে যায় আমার উল্লেখ যোগ্য সময়। এতো এতো পড়ে চুল ছেড়া বিশ্লেষন করে মূলত আর কিছু নয় সাবেলার দায়িত্বটা আমিই নিয়ে থাকি! সেই ১৯৯০ সনে যখন আমার বয়স ৭/ ৮, তখন থেকেই, বলতে গেলে ফুটবলের মহান শিল্পী ও মহাকবি আমার বড় ভাই দিয়াগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার কান্না, ম্যাক্সিকো কুকুর রেফারির জালিয়াতিতে আর্জেন্টিনার ২ জন কমরেডের লাল কার্ড প্রাপ্তি – হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ জালিয়াতির পেনাল্টি, অতঃপর হিটলালের উত্তরসূরী জার্মানীর তথাকথিত জয়; সেই ২৪ বছর আগে থেকে ৪ বছর পর পর আমি মহান পেশা হিশেবে এই সময়টাতে বেছে নেই বিখ্যাত ফুটবলারদের কলাম, জাদরেল ক্রীড়া সাংবাদিকদের রিপোর্ট ইত্যাদি পড়ে গবেষনা করে হাইপোথিসিস আর্জেন্টিনার পক্ষে দাঁড় করানো, তারপর স্বপ্ন ভঙ্গের গান- চে এর উত্তর সূরীদের বিদায়! এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলো, আমার ছোট ভাই কমরেড গ্রেট ম্যাসি ম্যাজিকে দু’ যুগ পর আর্জেন্টিনা সেমি ফাইনালে; ফলে মেজো ভাই হিশেবে অমার দায়িত্বটা বেড়ে গেলো। বড় ভাই ম্যারাডোনা যেমন ঘুমোতে পারছেন না ম্যাসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার বিরল আনন্দে, আমার ও তাই। যে যাই বলুক মহান স্রস্টা একটা দূর্দান্ত ইপিসোড লিখতে যাচ্ছেন। যে ইপিসোডে দেখা যাবে ডাচদের পরাজিত করার মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে। যে ফাইনাল মধুর প্রতিশোধের। কি করে ভুলে যাই হিটলার বাহিনীর ১৯৯০ সনের কাপুরুষোচিত জয়ের কথা। যে জয়ের আড়ালে ইতালি ও ম্যাক্সিকান রেফারির অন্ধকার ও রক্তাক্ত ভূমিকা ছিলো। এবার চাই শিল্পিত প্রতিশোধ। অনেকেই ভাবছেন যে জার্মানি ৭-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিলকে, সেই জার্মানির সামনে আর্জেন্টিনা পাত্তাই পাবেনা, তাদের উদ্দেশে বলি, নেইমার- সিলভা বিহীন স্কলারি বাহিনী ভেতরে ভেতরে মনস্তাত্তিক যুদ্ধে মূল যুদ্ধের আগেই হেরে বসেছিলো। দূর্গ যেখানে অরক্ষিত, প্রতিপক্ষের দূর্গ আক্রমণ করার জন্য ও যেখানে নেই নেপোলিয়নের মতো বীর নেইমার, যে নেইমারকে মার্কিংয়ে রাখার জন্য ব্যস্ত থাকার কথা অন্তত ৪/৫ জন জার্মান সোলজার, সেখানে এই ব্রাজিল আমার পাড়ার নয়াপাড়া ভাওয়াল টাইগার্স ক্লাবে পরিণত হওয়া ছাড়া পেলে, রোনালদো, জিকো ও রিভালদোর ব্রাজিল থাকার কথা নয়। আর্জেন্টিনাকে পাড়ার ক্লাব ভাবার সুযোগ নেই। এখানে আছেন সৃজনের আলো ছড়ানো কালোত্তীর্ণ কবি ও যাদুকর মেসি, এই সেনাপতিকে বদ করা কঠিনই হবে। দেড় ঘন্টা পর যখন ডাচদের বিপক্ষে আমরা লড়তে যাচ্ছি আমার বন্ধু- সঙ্গিনী জান্নাত, যিনি আর্জেন্টাইন সমর্থক ও মাঝারি দরের ফুটবল বোদ্ধা, তিনি গতকালকের খেলা দেখে মানসিক চাপে আমাকে বলছেন, ঘুমের ঔষধ আনোনি কেন? আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে উত্তর করলাম- আমার এক মেসিকে আটকাতেই ডাচরা তটস্থ থাকবে; হিগোয়েন, আগুয়েরোদের কথা বাদই দিলাম! দূর্দান্ত ফর্মে থাকা রোবেন, পার্সি ও স্লাইডারের প্রতি সন্মান রেখেই বলছি , ম্যারাডোনার উত্তর সূরীরা আজ জিতবে ২-০ বা ২-১ গোলে। মহান স্রস্টা শক্তি দিন। আমিন!
শাহান সাহাবুদ্দিন
৯ জুলাই, ২০১৪