বৈক মহামারী করোনার ধাক্কা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি টালমাটাল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মন্দার হাতছানি, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এবং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একদিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে নির্বাচনপূর্ব বাজেট হিসেবে জনতুষ্টির দিকে লক্ষ রেখে এবারের বাজেট দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
জানা গেছে, নানা সংকটের মধ্যেও অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগের বড় লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জন করতে চান। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরকারি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বিনিয়োগ একই জায়গায় আটকে আছে; জিডিপির ৩০ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। দেশি বিনিয়োগ যদি বাড়ে, ডলারের বাজারের অস্থিরতা যদি কেটে যায়, তাহলে দেশে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগই বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। এক বছরে দেশে এফডিআইয়ের নিট প্রবাহ বেড়েছে ২০ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ঘিরে দেশে বিনিয়োগের যে আবহ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব
পড়ছে বিদেশি বিনিয়োগে। সংকটের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়া দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গল। বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এফডিআই আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৩৪৭ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৪৭৯ মিলিয়ন ডলার। আগের বছর যেখানে এসেছিল ২৮৯ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৮৯৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
২০২২ সালে পুনর্বিনিয়োগকৃত আয় খাতে দেশে এফডিআই স্টক বাড়লেও ইকুইটি মূলধন ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ কমেছে। গত বছর দেশে পুনর্বিনিয়োগকৃত আয় ছিল ২৫১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৫৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৬২ মিলিয়ন ডলার।
গত বছরে দেশে ইকুইটি মূলধন আয় ছিল ১০২ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ১ হাজার ২২ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১০৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আয় কমেছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২২ সালে আন্তঃকোম্পানি ঋণে আয় তো দূরের কথা এ খাত থেকে বিনিয়োগ আরও তুলে নিয়ে গেছে। ২০২১ সালে এ খাতে ১৯ কোটি ৪৫ লাখ আয় হলেও গত বছর ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে।