পায়রা সমুদ্র বন্দর জানুয়ারি থেকে সীমিত পরিসরে জাহাজ চলাচল

Slider জাতীয়

 

paira_port_patuakhali_bd_29991
পটুয়াখালী: আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে সীমিত পরিসরে সিমেন্ট ক্লিংকারবাহিত জাহাজের আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে অপার সম্ভাবনার দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

এদিকে, পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দরটি চালু করতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পায়রা বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করতে চলছে কাজ শুরুর তোড়জোড়।

ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত এ এলাকার বন্দরের জন্য নির্ধারিত ভূমিতে কন্টেইনাল টার্মিনাল, ইয়ার্ড, শিল্প-কারখানা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা, সার ও সিমেন্ট কারখানা, তৈল শোধনাগার, জাহাজ নির্মাণ কারখানা, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং কুয়াকাটা কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধনে অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দরের সুবিধা, নিরাপদে জাহাজ চলাচল, বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অনগ্রসর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃস্টির মাধ্যমে এ বন্দর দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী এ অঞ্চলের মানুষ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের অন্য দুই সমুদ্র বন্দর থেকে পায়রা বন্দরের রয়েছে ভিন্নতা এবং অধিক সুযোগ-সুবিধা।

পায়রা বন্দরের ইনচার্জ ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বন্দরটি দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত হওয়ায় বিদেশ থেকে এখানে সরাসরি জাহাজ আসতে পারবে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের গভীরতা মাত্র নয় দশমিক দুই মিটার সেখানে পায়রা বন্দরের গভীরতা ১৫ মিটার। গভীরতা বেশি থাকায় জেটিতে সরাসরি মাদার ভেসেল ভিড়ে সেখান থেকেই লোড-আনলোড করা যাবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গভীরতা কম থাকায় মাদার ভেসেল থেকে পণ্য প্রথমে লাইটার জাহাজে তুলে সেখান থেকে মূল জেটিতে নিয়ে খালাস করা হয়। এতে পণ্য লোড-আনলোডে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। পায়রা বন্দরের ক্ষেত্রে এটি হবে না। তাছাড়া গভীরতা কম হওয়ায় চট্টগ্রাম বা মংলায় বিদেশি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে জোয়ারের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। কিন্তু পায়রা বন্দরের জেটিতে সবসময়ে বিদেশি জাহাজ ভিড়তে পারবে।

তিনি জানান, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বহিঃনোঙরে সিমেন্ট ক্লিংকারবাহিত জাহাজ আসা-যাওয়া ও মালামাল খালাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। আগামী এক বছরের মধ্যে সীমিত পরিসরে বন্দরের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের মধ্যে জেটিসহ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে বন্দরটি।

তিনি আরো জানান, দেশের সমুদ্র সীমানায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক জোনের স্বল্পতম দূরত্বে এ বন্দরের অবস্থান হওয়ায় আহরিত মেরিন রিসোর্স পরিবহনে পায়বা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরইমধ্যে বন্দরের পাশে পোশাক কারখানাসহ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য দুই হাজার এবং বন্দর নির্মাণের জন্য লালুয়া ইউনিয়নে ছয় হাজার একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিদেশি জাহাজের অবস্থান নির্ণয়ের সুবিধার জন্য ইতোমধ্যে একটি বাতিঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে কুয়াকাটায়।

ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান জানান, বহিঃনোঙরে ফেয়ারওয়ে বয়া স্থাপন, নৌবাহিনী দ্বারা রাবনাবাদ চ্যানেল থেকে কাজল ও তেতুলিয়া নদী হয়ে ভোলার পাশ দিয়ে কালিগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে বয়া স্থাপন, সার্ভে, ড্রেজিং এবং চ্যানেল মার্কিংয়ের প্রস্তুতি চলছে। যাতে প্রথম শ্রেণির নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে রাবনাবাদ চ্যানেলে আন্ধারমানিক নদীর তীরে ১৬ একর জমির ওপর পায়রা বন্দরের উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইতোমধ্যে মাটি ও বালু ভরাট, কাজওয়েসহ তিনটি পন্টুন স্থাপন, দুইটি লোড আনলোডিং ক্রেন নির্মাণ, দুইটি জেনারেটর ও ৭০টি সোলার লাইট পোস্ট স্থাপন, একটি পুকুর খনন, রাস্তা নির্মাণ, নদী রক্ষা বাঁধ তৈরি, একটি গুদাম ঘর, নিরাপত্তা ভবন ও ছোট পরিসরের একটি অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফোরম্যান তৈয়বুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সার্বক্ষণিক বিদ্যু‍ৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে ছয় কিলোমিটার দূর থেকে গোটা বন্দর এলাকায় টানা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের লাইন। এছাড়া গোটা এলাকায় ৭০টি সোলার লাইট পোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার মাসুদ রানা জানান, জেটি থেকে পণ্য খালাসের পর ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কের জন্য ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে এবং বালিয়াতলী খেয়াঘাট থেকে পায়রা বন্দরে আঞ্চলিক সড়কের জন্য আরো ছয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে জরিপ চালানো হচ্ছে। দেড়শ মিটার প্রস্থ এ রাস্তা বেড়িবাঁধের সমান উঁচু হবে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় মুদি দোকানদার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এক সময় এ স্থানটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। দিনে লোকজনের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেখানে বন্দর হওয়ায় লোকজনের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয় বেকার যুবকরা রাস্তার পাশে দোকানঘর, খাবার হোটেল নির্মাণসহ নানা কর্মসংস্থাসের সুযোগ পাচ্ছেন।

এদিকে, বন্দরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষুব্ধ ও হতাশ। দেশের স্বার্থে তারা বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে অন্যত্র যেতে রাজি হলেও জমির প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। বন্দর নির্মাণের আগের হিসাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জমির মূল্য দেওয়া হলেও বন্দর নির্মাণের পর আশেপাশের জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তারা নতুন করে জমি কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *