পনেরো দিনের বিরতি দিয়ে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি। গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, পুলিশি হয়রানিসহ চলমান আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ে জেলাভিত্তিক যুগপৎ সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে দলটি। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে দলটি। এই সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর এই সমাবেশ থেকে আন্দোলনের উত্তাপ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায় দলটি।
দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশটি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে হলেও এতে ঢাকা এবং এর আশপাশের জেলা ও মহানগর নেতাকর্মীরাও অংশ নেবেন। এসব জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্দেশনাও দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে মহানগর কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি প্রস্তুতি সভা করেছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও ধারাবাহিক বৈঠক করছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, সর্বশেষ ১ মে শ্রমিক দলের উদ্যোগে রাজধানীতে বড় জমায়েত ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার আমরা ‘সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে মাঠে নামছি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।’
বিএনপি নেতারা জানান, জেলাভিত্তিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপ শুরু করবে দলটি। ১০ দফা দাবির পক্ষে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ে আজ দেশের ৮২ সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের পৃথক বৈঠক থেকে এমন তথ্যই জানা গেছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় যে আন্দোলন করছি, তা মূলত জনগণের দাবি। সাধারণ মানুষই এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেবে এবং সরকার এসব দাবি পূরণে বাধ্য হবে। অন্যথায় আমরা এক দফার আন্দোলনে যাব।
জানা গেছে, প্রথম দফায় ১৯ অথবা ২০ মে থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হয়ে ২৭ মে পর্যন্ত চলবে। এরপর ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির জন্য কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটও মাঠে নামবে। গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভাগীয় গণসমাবেশের আদলে এই সমাবেশ করতে চায় দলটি।
দলটির নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনকে তারা নিজেদের বাঁচা-মরার সঙ্গে তুলনা করছেন। ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, থানায় থানায় কর্মিসভা হচ্ছে। এই সমাবেশে মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, এই সমাবেশকে সফল করাতে মহানগর ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। রমজানের ঈদের পর মহানগর বিএনপির এটি বড় আকারের কর্মসূচি।
কিছুদিন বিরতি থাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে একরকমের ঝিমিয়ে পড়া ভাব তৈরি হয়েছিল। এই অবস্থায় মাঠে নামার ঘোষণায় চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এসব জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নামবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জানান, এই সমাবেশ থেকে সরকার পরিবর্তনের যে আওয়াজ উঠবে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্য এ সমাবেশকে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে নিয়েছেন।