চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে কাল থেকে প্রভাব পড়বে

Slider বরিশাল


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’য় পরিণত হয়েছে। এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে আগামী রবিবার যেকোনো সময় স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রাথমিক প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায়। আগামীকাল শনিবার এসব এলাকায় বৃষ্টি, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন পূর্ভাবাসের পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার এলাকায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি

সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র এখন ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে আসছে। গত ৩ ঘণ্টায় এটি ২৪ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। বুধবার এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫-১৬ কিলোমিটার। গতি পরিবর্তন হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়টি আগামী রবিবার ঠিক কখন উপকূলে আঘাত হানবে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা কত হবে সেটি নির্ভর করবে ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমের সময় জোয়ার নাকি ভাটা থাকবে সেটার ওপর।

ঘূর্ণিঝড়টি সিডরের মতো বিধ্বংসী হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিডরের যেসব বৈশিষ্ট্য ছিল এটিও সেদিকেই যাচ্ছে। মোকার অগ্রভাগের প্রথম প্রভাব পড়বে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়। এসব এলাকায় প্রথমে দমকা বাতাস ও ভারী বৃষ্টি শুরু হবে।

টেকনাফে ৬৪ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত : ঘূর্ণিঝড় মোকার তা-ব মোকাবিলায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ এলাকায় ৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও সাতটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান ইউএনও মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগেরদিন থেকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি ও আইওএম, আনসার সদস্যরা এসব আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপত্তা ও লোকজনের থাকা-খাওয়াসহ সব বিষয়ে তদারকি করবে। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে দুর্যোগ মুহূর্তে গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও কাজ করবে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও থানা পুলিশের দুটি গাড়ি জরুরি মুহূর্তে পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবেন।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রশাসনের তরফ থেকে শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানি সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লোকালয়ে পানি বেড়ে গেলে উপকূলীয় অঞ্চলের পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন স্লুইসগেটগুলো তাৎক্ষণিক খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিনসহ প্রত্যেক ইউনিয়নের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

টেকনাফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে সব ফিশিংবোট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো ফিশিং ট্রলার সাগরে নামবে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মোকার ভয়ে নিজস্ব অর্থে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পশ্চিমপাড়া স্লুইসগেটের পাশে ভাঙা বেড়িবাঁধে প্রায় এক হাজার বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনো আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ৮ ও ৯নং ওয়ার্র্ডের লোকজনকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *