গাজীপুরের কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তার (২১) হত্যা মামলার আসামি মো. সাইদুল ইসলামকে (২৫) আটক করেছে র্যাব। গতকাল বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থেকে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১-এর অভিযানে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাইদুল দাবি করেছেন, রাবেয়াকে তিনি মৌখিকভাবে বিয়ে করেছিলেন। এ বিয়ে মেনে না নেওয়াতেই তিনি রাবেয়াকে খুন করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল জানিয়েছেন ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে রাবেয়া, তার দুই বোন ও মাকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। রাবেয়াদের বাসায় যাতায়াতের সুবাদে ওই পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সময় রাবেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে থাকেন তিনি। পাঁচ-ছয় মাস আরবি শেখার পর সাইদুলের কাছ থেকে তারা সবাই আরবি পড়া বন্ধ করে দেন।
তিনি জানান, এর মধ্যেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাবেয়াকে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন সাইদুল। পরে বিয়েটি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাবেয়া ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন তিনি। তবে সাইদুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রাবেয়ার পরিবার।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, এরপরও রাবেয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকেন সাইদুল। ২০২২ সালের অক্টোবরে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে সাইদুলের বিরুদ্ধে গাজীপুর সদর থানায় অভিযোগ করেন রাবেয়া। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাইদুল কিছুদিন রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে রাবেয়ার কলেজে গিয়ে এবং বাসার বাইরে আসা-যাওয়ার পথে ফের তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন সাইদুল। একপর্যায়ে তিনি রাবেয়াকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
রাবেয়া আক্তার হত্যা মামলার আসামি সাইদুল ইসলাম
খন্দকার মঈন বলেন, এর মধ্যেই সাইদুল জানতে পারেন যে, রাবেয়া উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে রাবেয়া ও তার পরিবারের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত রোববার বিকেলে স্থানীয় বাজারের কামারের দোকান থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি তৈরি করেন।
তিনি বলেন, পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় ছুরিটি সংগ্রহ করে রাবেয়াদের বাসায় গিয়ে সরাসরি তার কক্ষে ঢুকে যান সাইদুল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছুরি দিয়ে রাবেয়ার মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে জখম করেন। এসময় রাবেয়ার চিৎকারে তার মা ও দুই বোন এগিয়ে এলে তাদেরও এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান সাইদুল। তাদের চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাবেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে রাবেয়ার মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রাবেয়া ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে ভর্তি হন। কলেজটিতে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন রাবেয়া। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করেন। এরপর তিনি গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন সাইদুল। দুই মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দিয়ে শুধু বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন তিনি।
খন্দকার মঈন বলেন, হত্যার পর নিজের চুল-দাড়ি কেটে চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান সাইদুল। সেখান থেকে তাকে গত রাতে আটক করে র্যাব।