ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়ে আগামী রোববার কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। আজ বুধবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় যেকোনো সময় উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং নিম্নোক্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হলো।
১. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে।
২. খাবার স্যালাইনসহ জরুরি প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ওষুধ ও উপকরণ উপকূলবর্তী জেলায় পর্যাপ্ত মজুত রাখতে হবে।
৩. প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং সাপে কাপড় দেওয়া রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে হবে।
৪. উপকূলবর্তী এলাকায় মাঠ কর্মীদের (স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীসহ অন্য) মাধ্যমে উপদ্রুত অঞ্চলে নিয়মিত পরিদর্শন এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
৫. কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনে কর্মকর্তা/কর্মচারীর নৈমিত্তিক ছুটি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ প্রস্তুত রাখতে হবে।
৮. যেসব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে, সেসব ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স মেডিকেল টিম এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ প্রস্তুত রাখতে হবে।
৯. নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু রাখতে হবে।
১০. সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে ‘মোখা’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আগামীকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে এটা আঘাত হানার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দেশের পূর্বাভাস সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেছি, এটা এখন উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের উপকূল থেকে এখনো গড়ে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। আগামী ১২ মে নাগাদ এটি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেবে। এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে, সেটা আমাদের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটির গতি ঘণ্টায় ২২০ থেকে ২৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমারে এটি আঘাত হানবে। এটি টেকনাফের বর্ডার থেকে একটু দক্ষিণ দিক দিয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত এমনটাই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আঘাতের সময় এর গতি ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা এসওডি (দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি) অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
‘মোখা’ নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি জেলা কক্সবাজারই আক্রান্ত হওয়ার বলা হয়েছে পূর্বাভাসে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের নিম্ন এলাকা।’