সরকারবিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে ধীরে ধীরে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। দলটি ঢাকা অভিমুখে চূড়ান্ত এবং শেষ কর্মসূচি পালনের বিষয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা শুরু করেছে। তবে তার আগে এ মাসের শেষে কিংবা জুনের প্রথমার্ধে এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে রোডমার্চের মতো জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। আগামী সপ্তাহে দলটি রোডমার্চ কিংবা এ ধরনের একাধিক কর্মসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, নতুন কর্মসূচির পথ ধরে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায়। এই জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও বিএনপি সমর্থক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতামত নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীকাল ৪ মে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে বৈঠক করে তাদের মতামত নিয়েছেন দলের লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব মতামত নিয়ে স্থায়ী কমিটির পরবর্তী সভায় আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
কর্মসূচি নিয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে নেতারা দ্রুত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে নেতাদের কয়েকজন বলেন, গত কয়েক মাসে বিএনপি প্রায় সব ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। তাই এবার অধিকতর আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য কর্মসূচির পথরেখা তৈরি করতে হবে। এমন কর্মসূচি দিতে হবে যাতে আন্দোলনে গতি আসে। স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতাদের অনেকে রোডমার্চের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করেন।
বিএনপি নেতারা জানান, এসএসসি পরীক্ষার কারণে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে কোনো বড় ধরনের কর্মসূচিতে যেতে চায় না দলটি। পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সে লক্ষ্যে ঈদুল আজহার আগেই আন্দোলনের শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে চায় দলটি। আন্দোলনকে অযথা টেনে দীর্ঘমেয়াদি করতে চান না নীতিনির্ধারকেরা।
জানা গেছে, সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি কেন্দ্রিক আলোচনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর চলমান তিন দেশ সফর নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কোনো অর্জন নেই বলে মনে করছেন। এ সফরকে তারা পিকনিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গতকাল দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। এই আইনটি প্রণয়নে কোনো পর্যায়ই অংশীজনের মতামত নেয়া হয়নি। বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত বিলটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধানসম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত : বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক আলোচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত হয়েছে। এতে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১০ দফা অটুট রেখে অন্যান্য দলের দাবিগুলো সংযুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দলগুলো কী করবে তার একটি যৌথ রূপরেখাও তুলে ধরা হবে। বিএনপি ইতোমধ্যে ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এ দফার সাথে অন্যান্য দলের প্রস্তাবগুলো সংযুক্ত করা হচ্ছে।
সমমনা দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে এক মঞ্চ থেকে যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে। কবে এই ঘোষণা আসবে, তা আগামী দু’একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে।
যৌথ ঘোষণার বিভিন্ন দফা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির কিছুটা মতপার্থক্য ছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দল এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব দল মিলে যৌথ ঘোষণা দেয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব দ্রুত এ ঘোষণা দেয়া হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের ও রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা অল্পদিনের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপিসহ অন্যান্য দল নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে- সেটার রূপরেখা যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে তুলে ধরব। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।