দেশের পাঁচ জেলার বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর সিরাজগঞ্জে তিনজন, পাবনায় কলেজছাত্রসহ দুইজন, যশোরের চৌগাছা, বরগুনার পাথরঘাটা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় একজন করে মারা গেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের বাগডুমুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া দুই কৃষক হলেন ওই গ্রামের নাছিম খানের ছেলে আব্দুল মালেক (৫০) ও একই গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে মো. সোলেমান শেখ (৪২)।
বহুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন জানান, আব্দুল মালেক ও সোলেমান তাদের নিজ জমি থেকে ধান কাটছিলেন। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাত হলে তারা গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/অপারেশন) সুমন কুমার দাস বলেন, ‘বজ্রপাতে দুইজন কৃষকের মৃত্যু খবর পেয়েছি। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে জেলার কাজিপুরে মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে সিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার শুভগাছা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চর-বড়বাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের শাহীনের স্ত্রী।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার জানান, বৃষ্টির মধ্যে গৃহবধূ সীমা মাঠ থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। এ সময় তার দুইটি গরু মারা যায়।
পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় বজ্রপাতে খলিলুর রহমান মৃধা (৬০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
খলিলুর রহমানের ছেলে মো. ফিরোজ বলেন, ‘আমি ও বাবা সকালে গাছের কেটে রেখে আসি। দুপুরে আবহাওয়া খারাপ হলে বাবা ডাল আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতে বাবার মৃত্যু হয়।’
পাথরঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মোকসেদুল আলম আমাদের সময়কে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি জানান, যশোরের চৌগাছায় বজ্রপাতে বছির উদ্দিন (৫০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তেঘরী গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর ছেলে।
নিহতের চাচাত ভাই কামাল হোসেন বলেন, শনিবার দুপুরে বছির মাঠে যান। মাঠে ধান কাটা ও গোছানোর কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। খবর তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লুৎফুন্নেছা লতা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় বজ্রপাতে কলেজছাত্রসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে সুজানগর উপজেলার আহম্মেদপুরের চরগোবিন্দপুর ও আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন একদন্ত ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ প্রামাণিকের ছেলে এনামুল হক ( ২২)। তিনি পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অপরজন মনিরুজ্জামান আহম্মেদপুরের চরগোবিন্দপুর গ্রামের আকবর প্রমাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর পরই ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বজ্রপাতে হোসনেয়ারা বেগম (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের নলী জয়নগর গ্রামের আ. সালাম খলিফার স্ত্রী। সাপলেজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরাজ মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে হোসনেয়ারা বেগম বাড়ির পেছনের মাঠে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতে ওই নারী মারা যান।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।