আগামী দুই মাসের মধ্যে (মে ও জুন) পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, পাঁচ সিটির নির্বাচন অবাধ, স্ষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ করা গেলে ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আর আস্থা বাড়লে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনেও। এ জন্য ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে প্রার্থীদের সুষ্ঠু ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গত কয়েকটি উপনির্বাচনে এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হলেও ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। এ অবস্থায় পাঁচ সিটিতে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে তারা কাজ করবেন। ভোটে হেরে গেলে তা মেনে নেওয়ার মানসিকতাও থাকবে তাদের। তবে কোনোভাবেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর দুজন সদস্য বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। যতটুকু ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি নানা কৌশলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। স্বতন্ত্রের পাশাপাশি থাকবেন ছোট ছোট দলের প্রার্থীও। এসব প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই ভোটের বৈতরণী পার হতে হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। থাকতে হবে পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতাও। ইতোমধ্যে দল থেকে প্রার্থী ও স্থানীয় নেতাদের এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভাপতিম-লীর এই দুই সদস্যের একজন বলেন, পাঁচ সিটির নির্বাচন স্ষ্ঠুু করা গেলে নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়েও তাদের আস্থা বাড়বে। এ জন্য নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগামী ৯ মে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ফিরেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতাদের নিয়ে বসবেন। দলের দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি ভোটের মাঠে কেউ যেন অতি উৎসাহী হয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দেবেন।’
গাজীপুর ছাড়া বাকি চার সিটিতে দৃশ্যত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে সিলেট ও বরিশালে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসন করে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এসব সিটিতে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতাদের একমঞ্চে তুলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি চাইবেন।
ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা মনে করেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগপ্রার্থী আজমত উল্লার বিপরীতে জাহাঙ্গীর আলমের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার নেপথ্যে দলের তিন ‘প্রভাবশালী’ কেন্দ্রীয় নেতার ইন্ধন রয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন গাজীপুরের এক নেতা।
পাঁচ সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক এবং রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সিলেটে এখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতারা নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য মাঠে নামেননি। তবে শিগগিরই সবাইকে একমঞ্চে উঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে সিলেটে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর ‘রহস্যময়’ বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আরিফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি গোপনে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলে যোগাযোগ রাখছেন- এমন আলোচনাও নির্বাচনী মাঠে রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দৃঢ়বিশ্বাস আরিফুল হক চৌধুরী শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যাবেন না। সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এখনো নির্ভার হতে পারছেন না। যদিও সিলেট বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন মনে করেন, সব সমীকরণ অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হবে। আহমদ হোসেনের মতে, ‘সিলেটের দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও স্মার্ট। সুতরাং তার প্রতি ভোটাররা নিঃসংকোচে আস্থা রাখবেন। সুষ্ঠু ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হবে।’
সম্প্রতি বরিশাল দলের প্রার্থী ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান। বরিশালের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের নির্দেশনা হলো, জনগণের কাছে যেতে হবে, ভোটারদের কাছে যেতে হবে, ভোটারদের মন জয় করতে হবে।’
শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী থেকে গেলে তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত তো আছেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুুষ্ঠু ভোটে পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী রাজশাহী বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম কামাল হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের পাঁচ প্রার্থীর প্রতিই তৃণমূলের আস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন এবং প্রাপ্তির বিষয় বিবেচনায় রেখে ভোটাররা নৌকার দিকেই ঝুঁকবে।’
বরিশাল সিটি করপোরেশনে শেষমেশ কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না বলে মনে করেন বরিশালে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘বরিশাল সিটি নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে দলের জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম এবং আমরা নাগরিক সভার মধ্য দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আসছি। সামনে এসব বিষয় নিয়ে আবার বসব। ফলে বরিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ভোটের বিকল্প ভাবে না, ভাবছে না।’
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন হবে। ভোট হবে ইভিএমে।