কক্সবাজারসংলগ্ন পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে সম্প্রতি ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা সবাই জেলে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে অনেকেই বলছেন, নিহতরা জেলে নন, তারা জলদস্যু ছিলেন।
গত ২৩ এপ্রিল কক্সবাজারের বাঁকখালীর মোহনায় নাজিরারটেক এলাকার একটি মাছ ধরার ট্রলারের হিমাগার (বরফ রাখার জায়গা) থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। আলোচিত এ ঘটনায় একটি মাথার খুলিসহ ১০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেক্ষেত্রে ১১জন নিহত হয়েছেন এবং ট্রলারটিতে ১৪ জনের বেশি লোক ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৩ সালে একই স্থান থেকে ১৪ মাঝি-মাল্লার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই মরদেহগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি উদ্ধার করা মরদেহগুলোর মিল রয়েছে। আগের মরদেহের মতো এগুলোরও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাজিরাটেকর একাধিক ব্যক্তি জানান, নিহত ট্রলারমালিক মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের শামসুল আলম, মাঝি মুসা জালাল ও শাপলারের মিঠাছড়ি থেকে চার কিশোরসহ ছয়জনকে সাগরে নিয়ে যান। নিহতদের মধ্যে অস্ত্র ও জলদস্যু মামলার আসামি নুরুল কবিরও ছিলেন। এই ৩ জনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট উদ্ধার করলে এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে। তখন জানা যাবে, নিহতরা জেলে না কি জলদস্যু ছিলেন।
১১ মরদেহ উদ্ধার হলেও নিহত ট্রলারমালিক শামসুল আলমের সঙ্গে থাকা ওই ট্রলারের মাঝি হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ার ছড়ায় ভাড়া বাসায় থাকা মুসা জালালের মরদেহ বা তাকে জীবিত পাওয়া যায়নি। মুসা পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা থানার কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা অলি আহমেদ হাওলাদারের ছেলে। তিনিসহ ওই ট্রলারে থাকা আরও অন্তত ৩-৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ মুসার স্ত্রী বুলবুল আক্তার বলেন, ‘নিহত ট্রলারমালিক শামসুল আলম আমার বাসায় এসে আমার স্বামীকে তার বোটে মাছ ধরার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমি সামসু মাঝিকে বলেছি, ‘তুমি খারাপ মানুষ, তোমার নামে বদনাম আছে। তুমি আমার স্বামীকে নিও না’। এসব বলে বাধা দিই এবং স্বামীর কোমরে জড়িয়ে ধরে ওই বোটে যেতে না দেওয়ার চেষ্টা করি।’
বুলবুল বলেন, ‘পরে সামসু মাঝি আমার স্বামীসহ অন্যান্য লোকজনকে মোবাইল ফোনে ডেকে সাগরে নিয়ে যায়। সেই যে গেল আর ফিরে এল না। উদ্ধারকৃত মরদেহের মধ্যে তার মরদেহ নেই। জানি না সে কি বেঁচে আছে নাকি নেই। আমি তিন সন্তান নিয়ে এখন কীভাবে বাঁচব?’
তিন সন্তানসহ নিখোঁজ মুসা জালালের স্ত্রী বুলবুল আক্তার। ছবি: আমাদের সময়
মুসার স্ত্রী বুলবুল আক্তার এ কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন তার বাড়ির উঠানে অবস্থান করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সম্বলিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত দল। তারা ঘটনার আগে-পরে নিহতদের সঙ্গে কারা কারা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছিল এসব তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান গত মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদার নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত এবং প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল সে বিষয়ে তদন্ত করে মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য এখন চারটি পৃথক টিম মাঠে রয়েছে। খুব শিগগিরই এ ঘটনার নেপথ্যকাহিনী উদ্ঘাটিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্য দুজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আর তিনজনের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। তবে আদালতে তাদের রিমান্ড শুনানি হয়নি।