জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দেশটি তার হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। কারণ, স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে এই দেশটি অন্যতম।’
ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য জাপান টাইমস’-এ ‘জাপান আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে’ শিরোনামে ২৫ এপ্রিল লেখা এক নিবন্ধে এসব অনুভূতি ব্যক্ত করেন দেশটিতে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে ২৫ এপ্রিল চার দিনের সফরে দেশটিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। উন্নয়নে (জাপানের) অবিচল সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাপানের সরকারি উন্নয়ন সহায়তার সবচেয়ে বেশি পাওয়া দেশ হিসেবে রয়েছে।’
শেখ হাসিনা লিখেন, ‘আমার দেশ বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫১তম বার্ষিকীতে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককেও আরও দৃঢ় করতে আমি ফের টোকিওতে এসেছি। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো এবং প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি শ্রদ্ধা জানাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি, যিনি ছিলেন বাংলাদেশের বড় বন্ধু।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার লাভের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম।
তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জাপান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে, যা আমরা কখনো ভুলিনি বা ভুলব না। শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল জাপানি স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা জমা করে সেই টাকা ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লোকদের জন্য সাহায্য করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপর থেকে জাপান আমাদের দীর্ঘকালে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছে। জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার এবং আমাদের জনগণের কাছে।’
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার ছোট বোন শেখ রেহানা জাপানের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। কারণ, সে আমাদের পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের ছোট ভাই শেখ রাসেলের সঙ্গে ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে প্রথম জাপান সফর করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘জাপানের প্রতি তার পিতার স্পর্শকারতার উত্তরাধিকার লালন করার পাশাপাশি দেশটির বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি জাপানের অমূল্য অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে বারবার এখানে আসি। এগুলো আমাকে এই মহান দেশের ভাবমূর্তির মতো বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আমার শরীর ও আত্মাকে কাজে লাগাতে এবং আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এখন আমি অনুভব করি যে, আমাদের দুদেশের সম্পর্ক একটি ঈর্ষণীয় স্তরে জোরদার করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।’
বঙ্গবন্ধু জাপানের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ এবং জাপানকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি জাপানের জাতীয় পতাকার নকশা দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। উভয় পতাকাই বাংলাদেশের জন্য গাঢ় সবুজ এবং জাপানের জন্য সাদা রঙের পটভূমির বিপরীতে কেন্দ্রে লাল বৃত্তসহ আয়তাকার।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তাদের ফিরে আসার পর, তারা প্রায়ই তাদের জাপানের স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে, যা আমাদেরকে এখন আরও বেশি বেদনার্ত করে, সেই ঐতিহাসিক সফরের পর রেহানা এবং আমি ছাড়া আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে মাত্র ২২ মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।’