গাজীপুর: ২০১৩ সালে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রতীক পেয়ে প্রথম প্রচারনায় নেমে কয়েক মিনিটের মধ্যে টঙ্গী থেকে অপহরণ হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় ৭ঘন্টা পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হওয়ার পর জানা গেলো জাহাঙ্গীর অপহরণ হয়নি তাকে দলীয়ভাবে ডেকে নেয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনে নিজের আনারস প্রতীক রেখে কেঁদে কেঁদে আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবুও বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যায় আজমত উল্লাহ খান।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর আজমত উল্লাহ খানের সঙ্গে মিল হয়ে যায়। মিলের পর বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার জাহাঙ্গীর আলমের নিকট হেরে যায়। কিন্তু মেয়র হয়েও জাহাঙ্গীর আলম ও অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়রের দায়িত্ব পুরো সময় পালন করতে পারেননি। দুই মেয়াদের মধ্যে প্রায় একটি মেয়াদই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। মানুষ বলাবলি করেন, কিরণ সাহেব আজমত উল্লাহ খানের লোক। মানুষের কথা সত্য হলে ১০ বছরের মধ্যে গাজীপুর সিটির মেয়র পদটি প্রায় ৫ বছর চলে আজমত উল্লাহ খানের ঈশারায়। মেয়র হতে না পারলেও আজমত উল্লাহ খান গাজীপুর সিটির প্রধান অভিভাবক ছিলেন প্রায় ৫ বছর। এবার আজমত উল্লাহ খান নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর মানুষ বলছে, আর কৌশলে নয়, এবার আজমত উল্লাহ খান মেয়র হতে পারবেন। এই আশা এখন আওয়ামীলীগের।
পরিস্থিতি বলছে, এবার জাহাঙ্গীর নির্বাচন করলে তাকে ২০১৩ সালের মত করা হতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি নিশ্চিত। তাই এবার জাহাঙ্গীর মেয়র নির্বাচন করবেন কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে। কিন্তু বুধবার তিনটি মনোনয়নপত্র ক্রয় করার খবরে মানুষের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। বৃহসপতিবার পরিস্কার হবে জাহাঙ্গীর মেয়র হবেন না ঈশারায় মেয়র চেয়ারটি চালাতে চান। সব অংক মিলবে বৃহসপতিবার ৪টার পর। বৃহসপতিবার শুধু নয়, অপেক্ষা করতে হবে ৮মে পর্যন্তও। কারণ ৮মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
রাজনীতি সচেতন মানুষ বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম বা তার মা বা তার কেউ মেয়র পদে নির্বাচন করলে ফলাফল কি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের মা নির্বাচন করলে আরেকটি পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। সব হিসেব মিলাতে আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের কয়েকমাস আগে গাজীপুরের জাহাঙ্গীর নিয়ে আওয়ামীলীগ কতটুকু ব্যস্ত! তাও জল্পনায় আছে। জাঙ্গীরকে দমাতে গিয়ে এখন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করলে জাতীয় নির্বাচন হুমকি মুখে পড়বে এতে সন্দেহ নেই। তাই অনেকে মনে করেন, ২০১৩ আর ২০২৩ এক হবে না। হিসেবে হবে ভিন্ন রকম।
এদিকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে দুইজন প্রার্থীও মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। আব্দুলাহ আল মামুন ও মোঃ হারুন অর রশীদ। দুই জনের মধ্যে মামুন গাজীপুর আওয়ামীলীগের বড় একজন নেতার আশির্বাদপুষ্ট। তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, নৌকার প্রশ্নে কি আওয়ামীলীগে কোন্দল আছে! সব পরিস্কার হবে ৮মে।
এদিকে গোপন সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম সহ তার নিয়ন্ত্রনে তিনজন প্রার্থী থাকতে পারেন। দলের পদক্ষেপ বিবেচনায় কোন প্রার্থী থাকবে তা সময় বলে দিবে।
এ ছাড়াও লাঙ্গল এবং হাতপাখা ভালো ভোট পেতে পারে। ২০১৩ সালে লাঙ্গলের প্রার্থী নির্বাচন না করায় জোটের ভোট সবই পেয়েছিলেন আজমত উল্লাহ খান। ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরের আনারস প্রতীক পেয়েছিল ৫হাজার ভোট। ওই নির্বাচনে পরাজিত হন আজমত উল্লাহ।
নগরবাসী বলছেন, যারাই নির্বাচন করুক সুষ্ঠু ভোট চাই। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভেজাল ভোট হবে না বলে আশা ভোটারদের। এই অবস্থায় সঠিক ভোটে যিনিই মেয়র হন তার উপরই ভরসা সাধারণ ভোটারদের।