চিত্রনায়ক শাকিব খানের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলায় জামিন পেলেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিব তাকে জামিন দেন।
সকালে রহমত উল্লাহ তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিন আবেদন করেন। বেলা সোয়া ১১টার সময় শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই আদেশে মামলাটি বিচারের জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
শাকিব খান আজ আদালতে হাজির ছিলেন না। তার পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ তনু সময়ের আবেদন করেন। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৩ মার্চ শাকিব খান আদালতে হাজির হয়ে চাঁদাবাজির এই মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই দিন রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করেন।
মামলার আরজিতে শাকিব খান বর্ণনা করেছেন, তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক। অন্যদিকে রহমত উল্লাহ একজন প্রতারক, বাটপার ও ভুয়া প্রযোজক। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা সিনেমা ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এ অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ভারটেক্স মিডিয়া’র স্বত্বাধিকারী জানে আলমের সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন। এই সিনেমাতে শিবা আলী খানকে নায়িকা হিসেবে মনোনীত করা হয়। সিনেমার শুটিংয়ের জন্য শাকিব খান ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান। শিবা আলী খান সেখানে যেতে না পারায় তার স্থলে অ্যানি রেনেসাঁ সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিককে মনোনীত করা হয়।
শাকিব খান মামলায় অভিযোগ করেন, রহমত উল্লাহ তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করেন। অস্ট্রেলিয়ায় একটি নামীদামি ক্লাবে রহমত উল্লাহর সঙ্গে শাকিব খান যান। সেখানে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে পানিও পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় অ্যানি রেনেসাঁ সাবরিন তাকে হোটেল কক্ষে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শাকিব যেহেতু অসুস্থ ছিলেন এবং একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন, সে কারণে অ্যানি রেনেসাঁ সাবরিন নায়ক শাকিবকে নিয়ে হোটেলের কক্ষে যান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই ঘটনার পরদিন রহমত উল্লাহ ফোনে শাকিবকে বলেন, ‘হোটেলে তুমি কী করেছ সব ভিডিও ক্লিপ আমার কাছে আছে। তুমি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দিলে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হবে। এতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হবে এবং তুমি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’
পারিবারিক সমস্যা ও নিজের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা করে শাকিব খান সাড়ে ৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার রহমত উল্লাহকে দেন। পরে বিভিন্ন সভায় বাংলাদেশের ৪০ লাখ টাকার মতো রহমত উল্লাহকে দেন শাকিব খান। তা সত্ত্বেও রহমত উল্লাহ অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
শাকিব খান মামলায় আরও বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় গেলে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে। তারা তখন বলেন, শাকিব খান একটি ষড়যন্ত্রের শিকার। এরপর রহমত উল্লাহকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন শাকিব খান।
এর আগে এই প্রযোজকের নামে মানহানির মামলা করতে গুলশান থানায় গিয়েছিলেন শাকিব। তবে পুলিশ মামলাটি না নিয়ে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর শাকিব ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যান অভিযোগ জানাতে।
চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করার পর রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন শাকিব খান। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করার পর বিচারক জুলফিকার হায়াত সেটি তদন্তের নির্দেশ দেন।