পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রিয়জনদের দেশে রেখে বছরের পর বছর বিদেশে ঈদ করতে হচ্ছে অনেক প্রবাসীকে। প্রবাসে পরিবারের সদস্যরা ছাড়া ঈদ উদযাপন যেন আনন্দহীন।
সারা বছর প্রবাসের মাটিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করেন প্রবাসীরা। এরপরও ঈদে হাতে গোনা কয়েকজন দেশে যেতে পারেন। নানা জটিলতায় অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে দেশে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে পারেন না। তাই চোখের পানিতে বুক ভরা হাহাকার নিয়ে ঈদকে স্বাগত জানান প্রবাসীরা।
ইউরোপের দেশ গ্রিসে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায়ই ৪০ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। তাদের বেশিরভাগই কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাদের অনেকের কাছে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও দেশে এসে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না।
গ্রিসের বন্দর নগরী পিরিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের নজির মিয়া। ৯ বছর পর দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের জন্য জামা-কাপড়সহ নানান উপহার কিনে আনন্দে লাগেজ ভরেছিলেন। কিন্তু ভিসা জটিলতায় এবারও তিনি দেশে আসতে পারেননি।
দেশে আসতে পারবেন না এমন তথ্য জানতে পেরে সন্তানদের নতুন পোশাক বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েন নজির মিয়া। সেই ঘুম থেকে আর ওঠেননি তিনি। এখন নাজির মিয়া দেশে যাচ্ছেন, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।
সিলেটের বিশ্বনাথের শফিক মিয়াও গ্রিসে অবৈধভাবে বসবাস করছেন দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে। এখন দেশে যাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশটিতে অবৈধ হওয়ায় আমি মেনেই নিয়েছি যে, বেঁচে থাকতে আর কখনো দেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হবে না আমার।’
প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন নোয়াখালীর আবদুল হক। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র হাতে না পাওয়ায় এবারও দেশে ঈদ করতে যাওয়া হয়নি তার। তাই এবার ঈদেও ভিডিও কলে পরিবার সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
ঈদে দেশে যেতে না পারলেও প্রবাসীরা বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন। রান্না করেন লাচ্ছা সেমাই, মাংস ও পোলাও। প্রবাসীদের নিয়ে একসঙ্গে চলে খাওয়া-দাওয়া। এভাবেই প্রবাসে ঈদের আনন্দ খুঁজতে থাকেন তারা।
গ্রিসে সরকারিভাবে একটি মসজিদে পুলিশ পাহাড়ায় বেশ কয়েকটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন মসজিদে ছোট পরিসরে ঈদের জামাতে অংশ নেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বেশিরভাগ ঈদের জামাত মসজিদে হওয়ায় কিছুটা নিরাপদে আছেন দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমরারা। কারণ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বর্ণবাদীদের চোখে পড়লে ঈদের আনন্দ বেদনায় রূপ নিতে পারে।
গত বছরের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করার মতো। ২০২২ সালে ঈদের নামাজ শেষে এক পাকিস্তানি প্রবাসী সড়ক দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে বর্ণবাদী এক ট্যাক্সিচালক তাকে গুলি করেন। কারণ তিনি মুসলিম, টুপি ও কাবলি ড্রেস পরেছিলেন। তবে ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেছেন। পরে অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘গ্রিস সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে অবৈধ প্রবাসীদের দ্রুত বৈধ করা হবে। এ কার্যক্রম দ্রুত শুরু হলে অনেক প্রবাসী দেশটিতে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশটিতে বৈধ হয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবেন প্রবাসীরা।’