লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষ

Slider গ্রাম বাংলা


চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। রেকর্ড উৎপাদনের কথাও প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ সিলেটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। গ্রামে ফিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না পেয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।

গ্রামে বিদ্যুৎ কম থাকার কারণ হিসেবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন বাস্তবায়ন করতে গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন বাড়ানো হয়েছে। এ বিতরণ লাইন অনেক দীর্ঘ। কোথাও যদি একবার ছিঁড়ে পড়ে, তাতে সেই বিতরণ লাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকা অন্যান্য সঞ্চালন

লাইনও বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, গ্রামে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও তৈরি হয়নি। সরকার প্রথমে সবাইকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এনেছে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক কারিগরি অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এক সময় গ্রামেও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী আরও বলেন, ‘এখন সরকার সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর চেয়ে বেশি উৎপাদন করতে হলে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হবে। সেটার জন্য আরও এলএনজি টার্মিনাল কিংবা ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য কাজ করছে সরকার। চাইলেই এখন সাড়ে আটশ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস প্রতিদিন আমদানি করা যাচ্ছে না। এদিকে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি না করাই ভালো।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এ বছর সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এ বছর তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, যা আগে ধারণা করতে পারেনি পিডিবি।

গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, গ্রামের চেয়ে অবকাঠামো ভালো হওয়ায় শহরে বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে। বাণিজ্যিক কারণেও শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে।

এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে ফেনীর ছাগলনাইয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গত রবিবার ভাঙচুর চালান স্থানীয়রা। বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সম্প্রতি সিলেটে মধ্যরাতে সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এদিকে জনরোষ থেকে বাঁচতে নিরাপত্তা চেয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। বর্তমানে সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, গত রবিবার সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সেদিন সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াট। পরের দিন উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট ‘সিস্টেম লস’ হয়। এ ছাড়া বর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা আর সরবরাহের মধ্যে একটা ফারাক থেকেই যায়।

এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশে নজিরবিহীন দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে দেশের অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রচ- কষ্ট হচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’

প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এ বছর গ্রীষ্ম, সেচ মৌসুম এবং রোজা একসঙ্গে হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্ব প্রস্তুতির স্বাক্ষরও রেখেছি। কিন্তু গত ৫০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে যে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে, তাতে ধারণার চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *