তীব্র গরমে দুঃসহ লোডশেডিং

Slider সারাদেশ


তীব্র দাবদাহের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে; তবে সে অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে লোডশেডিং বাড়ছে। আর লোডশেডিংয়ের পরিমাণ গ্রামে বেশি। সংকটের কারণে ইতোমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

প্রতিমন্ত্রী গতকাল ফেসবুকে লেখেন, ‘দেশে নজিরবিহীন দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে দেশের অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রচ- কষ্ট হচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’

প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এ বছর গ্রীষ্ম, সেচ মৌসুম এবং রোজা একসঙ্গে হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে- সেটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্বপ্রস্তুতির স্বাক্ষরও রেখেছি। কিন্তু গত ৫০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে যে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে, তাতে ধারণার চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনাকাক্সিক্ষত এই দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।

সেই সঙ্গে সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই, পরিস্থিতি উত্তরণে বিদ্যুৎ বিভাগ সর্বাত্মক কাজ করছে।

খুব শিগগিরই আবারও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে আসবে।’

গত সোমবার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হয়। ওই দিন রাত ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬০৪ মেগায়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট।

রেকর্ড উৎপাদনের মধ্যেও লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘রেকর্ড উৎপাদনের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের হিসাব মেলানো যাবে না। দেশে যদি বিদ্যুতে চাহিদা থাকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট; সেখানে ১৫ হাজার পর্যন্ত উৎপাদন হলে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে। এই দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে।’

এদিকে লোডশেডিং নিয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন ফেসবুকে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমাদেরকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের কষ্ট হচ্ছে। সে জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করি খুব শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

লোডশেডিংয়ের ফলে কৃষিসেচেও সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে মানুষের নানা ধরনের কষ্ট হচ্ছে। পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো মানুষকে পানি সরবরাহ করতে পারছে না।

শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও কেন লোডশেডিং- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান আমাদের সময়কে বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে মেশিনারজি হিট হয়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে কারণে কোথাও কোথাও কিছুটা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে সেটা দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সরকার সর্তক অবস্থায় ছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। দাম কম হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়ে দেয় সরকার, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গড়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

এদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৭ মেগাওয়াট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *