চট্টগ্রামে পাহাড় থেকে ২৫ বসতি উচ্ছেদ

Slider চট্টগ্রাম জাতীয়

ctg_map_bbnn_938020830

চট্টগ্রাম: নগরীর লালখান বাজার এলাকায় টাংকির পাহাড়ের নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা ২৫টি বসতঘর উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এসময় বসতিগুলোর বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এর আগে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে নগরীর মতিঝর্ণা এলাকায় প্রায় ৭০টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘর সিলগালা এবং ৩০টি বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন জানান, মতিঝর্ণার পাশে টাংকির পাহাড় থেকে ২৫টি বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘরে লোকজন ছিল, বাকিগুলো ছিল খালি। যারা ছিল তাদের সরিয়ে স্থানীয় শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।

টানা বৃষ্টির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি পুনরায় কেউ যেন সেখানে আসতে না পারে প্রশাসন বিষয়টি তদারকি করছে বলে তিনি জানান।

অভিযানে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু হাসান সিদ্দিকও ছিলেন।

পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিস, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

এর আগে গত ১৪ জুন মতিঝর্ণা এলাকার বাদল বাবুর কলোনি ও ৫ নম্বর গলি থেকে ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নগরীর ১১টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ৬৬৬টি পরিবার বাস করছে। এর মধ্যে নগরীর একে খান মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৮৬ পরিবার, ইস্পাহানি পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে হারুন খানের পাহাড় ও বায়তুল আমান সোসাইটির কাছে পাহাড়ে ৫টি, কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে (পানির ট্যাংক) ২৭টি, লেকসিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ১২টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকা পাহাড়ে ২২টি, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১১টি, ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে ৯টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যাকাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৩টি, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ৩২০টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এ ১১টি পাহাড় ছাড়াও আরও ১৪টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে।

চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি পাহাড়গুলোতে প্রভাবশালীদের সহায়তায় নিম্ন আয়ের লোকজন অবৈধভাবে বসতি গড়ে তোলে। প্রতি বছরই চট্টগ্রামে পাহাড় ও মাটি ধসে বিভিন্ন এলাকায় লোকজন মারা যায়।

বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও দেওয়াল ধসে গত ৮ বছরে প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট লালখানবাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে নগরীর পাহাড়তলী, সিআরবি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মারা যান আরও ১৫ জন।

২০১১ সালের ১ জুলাই পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৮ জনসহ বাটালি পাহাড়ের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জন মারা যান। ২০১২ সালে ১৭ জুন নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৩ জন মারা গেছেন। ২০১৩ সালে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৫ জনের।

২০০৭ সালে পাহাড় ধসের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ প্রণয়ন করে। তবে সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

শুধু বর্ষা মৌসুম আসলে তড়িঘড়ি করে কিছু বসতি উচ্ছেদ করে প্রশাসন। তারপর সারা বছর কোন খবর থাকে না প্রশাসনের। উচ্ছেদকারীদের স্থায়ীভাবে কোথাও পুনর্বাসন না করায় তারা পুনরায় পাহাড়ে অবৈধভাবে দখল করে বসতি তৈরি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *