পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি)র নেতাকর্মীরা। এ সময় অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার ওভারব্রিজ সংলগ্ন ও থানার পাশে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায় জেপির নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই রাত ৮টার দিকে জাতীয় পার্টির (জেপি) উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল, যুব সংহতি (জেপি) সভাপতি রিজভি জমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক মামুন সরদারসহ ৫০/৬০ জন অজ্ঞাত যুবক আওয়ামী লীগের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। অফিসের ভেতরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে নিচে ফেলে দেয়। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় বাইরে থাকা ছাত্রলীগের তিনটি মোটরসাইকেল। এতে ১৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়ে ভান্ডারিয়া ও আশপাশের উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ৫০/৬০ জন যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র রামদা, কিরিচ, দা হাতে নিয়ে এ হামলা চালান। হামলার সময় তারা জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নামে স্লোগানও দেন। এরপর হামলাকারীরা রাত পৌনে ৯টার দিকে কলেজ রোডে ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিজ বাসভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করে চলে যায়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম ওই অফিসে নিয়মিত দলীয় কাজ করতেন। কিন্তু তিনি সে সময় তিনি অফিসে ছিলেন না।
এ বিষয়ে তিনি জানান, সোমবার দুপুরের পর তেলিখালীতে একটি ইফতার অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় পার্টি (জেপি) দলীয় নেতাকর্মীরা ভান্ডারিয়ায় ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। মূলত জেপি নেতারা বিএনপি নেতার বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে আজেবাজে মন্তব্য ও কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আর তাতেই জেপি নেতাকর্মীরা প্রথম দফায় তেলিখালি বসে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করে।
মিরাজুল ইসলাম বলেন, এর কিছু সময় পরে ভান্ডারিয়া জেপি (মঞ্জু) এর দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দফায় দেশীয় নানা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং লুটপাট করে। পরে একই সন্ত্রাসীরা আমার বহুতল ভবনে হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করতে চাইলে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তেলিখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম তালুকদার মাসুম জানান, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’ মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপনের নেতৃত্বে তার জুনিয়া গ্রামের বাড়ির সামনে সোমবার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি জেপির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিলে বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম কটূক্তি করেন। এ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ জেপির নেতৃবৃন্দের সাথে তর্ক বির্তকের এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। উভয়পক্ষের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তিনজন আহত হয়েছে।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভান্ডারিয়া জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল জানান, তেলিখালী ইউনিয়নে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং হামলায় তাদের ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের অফিসে হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকেই ভান্ডারিয়া বাজারে বিক্ষোভ ও গণমিছিল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।
ভান্ডারিয়া থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান জানান, তেলীখালী এলাকায় একটি ইফতার পার্টি শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জেপি(মঞ্জু) গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন আছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। দু’পক্ষের লোকই আহত হয়েছেন।