সুদানের রাজধানী খার্তুমসহ দেশজুড়ে অনেক জায়গায় গত শনিবার থেকে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সংঘর্ষে অন্তত ১৮৫ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ১৮০০ জন। বিবিসি, আল-জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) ক্ষমতা নিয়ে ভাগাভাগির দ্বন্দ্বেই লড়াইয়ের সূত্রপাত।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, বহু দিন ধরে চলা ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব থেকে হুট করে কেন তুমুল লড়াই শুরু হলো। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির দুই শীর্ষ জেনারেল চলমান এ সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে। এই সংঘর্ষের জন্য তাদের নেতৃত্বাধীন দুটো বাহিনী পরস্পরকে দায়ী করছে।
সুদানের সেনাপ্রধান, তিনিই মূলত দেশটির প্রেসিডেন
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটিতে এক ক্যু হয়। এরপর দেশটি পরিচালনা করছে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কাউন্সিলের শীর্ষ দুই সামরিক নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোকে নিয়েই এই বিরোধ।
জেনারেল আল-বুরহান সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং এ কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে দেশটির উপ-নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের কমান্ডার। তিনি হেমেডটি নামেই বেশি পরিচিত।
বেশ কয়েকদিন আগেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এ দুই জেনারেল একসঙ্গে কাজ করেছেন।
কিন্তু পরবর্তীতে দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধের দানা বাধে। বিশেষ করে সুদানের ভবিষ্যৎ এবং দেশটির বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা নিয়ে তারা ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেন।
এর আগে দেশটিতে বেসামরিক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন গ্রুপ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সংলাপও ব্যর্থ হয়।
আরএসএফ প্রধান
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই জেনারেলের মধ্যে যে বিষয়টি বিরোধের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে তা হচ্ছে, এক লাখ সদস্যের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা। পরে নতুন এই বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবে সে বিষয়টি।
গত শনিবারের লড়াই শুরুর আগে দেশটিতে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই দুই বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরএসএফ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
তবে আরএসএফের এমন সিদ্ধান্ত ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি সেনাবাহিনী। বাহিনীটি একে তাদের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে। তবে দুই পক্ষের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এর পরেই শনিবার দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়। তবে ঠিক কোন বাহিনী আগে হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি।