রাজধানীর নিউমার্কেটে গতকাল শনিবারের অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) অভিযুক্ত করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগের রাতে করপোরেশনের কর্মীরা ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে নিতে সতর্ক করে। ওই রাতেই মার্কেটসংশ্লিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ একটি ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়। আর এরপরে ভোরেই ঘটে অগ্নিকাণ্ড।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি করপোরেশন থেকে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফুটওভার ব্রিজ বিচ্ছিন্নকরণের সঙ্গে আগুনের কোনো যোগসূত্র নেই। অন্যদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর দাবি করেছেন, বিক্ষুব্ধ হকাররাই আগুনের ঘটনা ঘটাতে পারেন।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত মার্কেট নিউ সুপার মার্কেট। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে মার্কেটটি সংযুক্ত হয়েছে গাউছিয়া সুপার মার্কেটে। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে মিশেছে ফুটওভার ব্রিজের রেলিং। ব্যস্ত সড়কের ওপর নির্মিত ব্রিজটি গত বছরই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর এই ব্রিজ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ে। কারণ এর ওপরে অনেক হকারের দোকান। পাশাপাশি ক্রেতারাও সেখানে কেনাকাটা করেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হয়। সেই আশঙ্কা থেকেই ঈদের আগেই ব্রিজটি ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আকন্দ এন্টারপ্রাইজ ১৫ এপ্রিল রাত ২টা হতে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ব্রিজটির সঙ্গে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। আর অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে। ডিএসসিসি বলছে, যেখানে আগুনের সূত্রপাত- সেই স্থান থেকে সেতুটির দূরত্ব ৪শ ফুটেরও বেশি। তা ছাড়া সেতু বিচ্ছিন্নকরণে কোনো গ্যাস কাটার ব্যবহার হয়নি বলেও দাবি তাদের।
তবে ঈদের আগেই কেন ব্রিজ ভাঙতে হবে- সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মা এন্টারপ্রাইজ এবং বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি দোকন ছিল ব্যবসায়ী নাসিমা চৌধুরীর। অগ্নিকাণ্ডে একটা দোকানের মালামাল বের করতে পারলেও অপরটি থেকে কিছুই বের করতে পারেননি তিনি। প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এই ব্যবসায়ী আমাদের সময়কে বলেন, ‘রাত ৩টার সময় সিটি করপোরেশনের লোক এসে আমাদের বলে ফুটওভার ব্রিজের নিচে যাদের দোকান আছে সেগুলো সরিয়ে নিন। এরপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় তারা নেবে না। এই কথায় কী বুঝায়?’
যাদের পাইকারি মাল দিতেন, সেসব দোকান পুড়ে যাওয়ায় গভীর চিন্তায় পড়েছেন হুমায়ন কবীর। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, গত বছর ঈদের সময় ঢাকা কলেজের সঙ্গে গোলমাল করে ব্যবসা গেছে। এবার মার্কেটে আগুন। ফুটওভার ব্রিজ ভাঙার কি সময় চলে গেছে? রোজার আগে বা ঈদের পরে কেন ভাঙল না?
অগ্নিকাণ্ডকে দুঃখজনক বলে দাবি করলেও ব্যবসায়ীদেরকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন স্থানীয় ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ স ম ফেরদৌস। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ঈদের আগে ভাঙার পক্ষে ছিলাম না। বঙ্গবাজারের ঘটনার পর মেয়র একটু শঙ্কিত ছিলেন- এখানে দুর্ঘটনা হলে বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। তাই এখনই ভাঙার তাগাদা দিচ্ছিলেন মেয়র। এর পর আর আমি কিছু বলিনি। তবে আমরা সঠিক ঘটনা বের করতে পারব। আমাদের ওখানে হকার্স লীগ, ব্যবসায়ী লীগ সব আমাদের লোক আছে। আমরা বের করে ফেলতে পারব দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা। তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে গতকালই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিএসসিসি। এতে নিউমার্কেট অগ্নিকাণ্ডে ভিত্তিহীন সংবাদ ও গুজব প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।