গাইবান্ধায় শাকিল খান নামের এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নাকাটি করে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে কথা বলেন। লাইভ শেষে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন ওই যুবক।
আজ রোববার নিহত শাকিলের লাইভ ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এর আগে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শহরের রেলগেট জাসদ কার্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শাকিল খান (২৩) সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ভগমানপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইফতারের আগ মুহূর্তে শহরের রেলগেট এলাকায় শাকিল ঘোরাঘুরি করেন। এ সময় রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ঘটনাস্থলে আসলে তিনি ওই ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করেন। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে শাকিল খান তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ওইদিন বিকেলে লাইভে আসেন। লাইভে তিনি তার দাম্পত্য কলহ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় শাকিল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেন।
১৯ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমেই শাকিল খান সালাম দিয়ে শুরু করেন। পরে তিনি তার গ্রামের নাম ও মা-বাবার পরিচয় দেন। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের এক মাস আগে বিয়ে করার কথা জানান। তিনি বলেন, দাম্পত্য কলহ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। এরপর ফেসবুক লাইভ বন্ধ হয়ে যায়।
শাকিলের বাবা বাচ্চু মিয়ার অভিযোগ, শাকিলের এক মাস আগে প্রতিবেশী শাহিন মিয়ার মেয়ে শারমিন আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শাকিলকে কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছিল না শারমিনের পরিবার। দাম্পত্য কলহ নিয়ে শাকিলের স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে আছে। একাধিকবার বিষয়টি মীমাংসা করে সংসার করার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। কিন্তু শাকিলের স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ি এতে রাজি হয়নি।
বিষয়টি সমাধানের জন্য শ্বশুর শাহিন মিয়াকে শাকিলের বাবা ১৫ শতক জমিও দলিল করে দেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। উল্টো শাকিলকে তারা মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানোসহ বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। শাকিলের আত্মহত্যার জন্য তার স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ি দায়ী, বলেন তার বাবা।
মৃতের বড় ভাই সৌরভ মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইকে তার স্ত্রী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজনই হত্যা করেছে। তাদের অত্যাচারে সে আত্মহত্যা করেছে। আমার ভাইয়ের আত্মহত্যার পেছনে জড়িতদের ফাঁসি চাই।’
রেলওয়ে পুলিশের গাইবান্ধা ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান বলেন, ‘রাতেই নিহত যুবকের মরদেহ স্বজনরা শনাক্ত করে। ময়নাতদন্তের জন্য সকালে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে শাকিলের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’