পত্রিকা বিলি করে লেখাপড়ার খরচ মেটাতেন পিটার হাস

Slider বাংলার মুখোমুখি

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস তার জীবনের কিছু চমকপ্রদ ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। জানিয়েছেন, উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন পত্রিকা বিলি করে, লনের ঘাস কেটে এবং ফ্যাক্টরিতে কাজ করে।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ‘পিটারের সাথে চা’ এর দ্বিতীয় সিজনের প্রথম পর্বে রাষ্ট্রদূত হাসের মুখ থেকে চমকপ্রদ এসব তথ্য জানা যায়।
অনুষ্ঠানে এআরএসএম শোভন নামের একজনের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘পিটারের সঙ্গে চা চক্রে আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। শোভনের কাছ থেকে একটা প্রশ্ন এসেছে, যেটা আরও ব্যক্তিগত। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, আমার শৈশবের অবিস্মরণীয় স্মৃতি কী?’

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। সেটি আমার জন্য খুব কঠিন হলেও আমি বলতে চাই, আসলে আমি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও কলেজে (বিশ্ববিদ্যালয়) লেখাপড়ার ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি প্রতিদিনের খরচ যোগাতে দৃশ্যত অদ্ভুত কিছু কাজ করেছি। সেগুলোর মধ্যে খবরের কাগজ বিলি করা, লনের ঘাস কাটা, দারোয়ান, গামবল, ফ্যাক্টরিতে সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে গামবল গোছানোসহ বিভিন্ন কাজ করেছি। আমি একটি গ্যাস স্টেশনে মাঝরাতের শিফটে কাজ করতাম।’t

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘আমি গাড়ির মরিচা রোধে কাজ করেছি। একই সঙ্গে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরেরও ব্যবস্থা করেছি। পড়ালেখার ক্রমবর্ধমান খরচ জোগাতে আমি এসব কাজ করেছি।’

এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে জানিয়ে পিটার হাস বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা, স্বাধীনতা, দায়িত্বজ্ঞানসহ অনেক কিছু শিখেছি। আর সে কারণেই এগুলো আমার শৈশবের অবিস্মরণীয় স্মৃতি। প্রশ্নটা করার জন্য শোভনকে অনেক ধন্যবাদ।’

‘চা উইথ পিটার’ ভিডিও কনটেন্ট ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেইজের একটি আয়োজন। বৃহস্পতিবার এর দ্বিতীয় সিজনের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। আর সেখানেই নিজের শৈশবের স্মৃতির কথা শুনিয়েছেন রাষ্ট্রদূত হাস।

এদিকে এই ভিডিও প্রকাশের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেছে। এমনটাই দেখা গেছে ভিডিওটির কমেন্ট সেকশনে।

২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার হাসকে চূড়ান্ত করে। সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের মিনিস্টার -কাউন্সিলর মর্যাদার পেশাজীবী সদস্য মিস্টার হাস ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং একইসাথে অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাণিজ্য নীতি ও সমঝোতা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মিস্টার হাস অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-এর যুক্তরাষ্ট্র মিশনে শার্জে দ্য’ফেয়ার ও ডেপুটি পার্মানেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ভারতের মুম্বাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুল জেনারেল এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ইকোনোমিক কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি লন্ডন, রাবাত, ওয়াশিংটন, পোর্ট-অ-প্রিন্স ও বার্লিনে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদে কর্মরত ছিলেন।

মিস্টার হাস ইলিনয় ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং জার্মান ভাষায় বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে মার্শাল স্কলার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং বিশ্ব অর্থনীতির রাজনীতি এবং তুলনামূলক সরকার উভয় বিষয়ে এমএসসি (অর্থনীতি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের জেমস ক্লেমেন্ট ডান পুরস্কার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক অর্জন বিষয়ক কর্ডেল হাল পুরস্কার পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *