মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বাজারে চাহিদা থাকায় ও লাভজনক হওয়ায় বগুড়ায় ভুট্টার চাষ বেড়েছে। চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। সে হিসাবে ১ লাখ ২২ হাজার টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জেলার কৃষি বিভাগ। ভুট্টা বাজারে ওঠার পর থেকে চাষীরা ভালো দাম পাচ্ছেন।
বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুর উপজেলায় ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। তবে জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার যমুনা ও বাঙালি নদীর চরে শতশত একর জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলাগুলোয় ভুট্টার চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।
লাভজনক এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে জেলা কৃষি অধিদপ্তর সার বীজ ও কৃষি পুনর্বাসনসহ পরামর্শ সহায়তা দিয়ে কৃষকদের উৎসাহী করছে। ফলে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ভুট্টা চাষে। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বাড়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় বগুড়ায় সব ধরনের ফসল ফলে। চলতি বছর অন্যান্য ফসলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বগুড়ায় রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টার চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টরে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে ১২ হাজার ১০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের আশা এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে।
কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। সে অনুপাতে বিঘাপ্রতি ফলন আসে ৩০-৩৫ মণ। তবে চর এলাকায় বিঘাপ্রতি ভুট্টার ফলন ৪০-৫০ মণ। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯৮ সালে জেলায় ভুট্টার আবাদ হতো মাত্র ২ হাজার ১৬৪ হেক্টর জমিতে। পর্যায়ক্রমে চাষ বাড়তে বাড়তে এখন ১২ হাজার ১০ হেক্টরে চাষ হচ্ছে।
বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রামের চাষী আব্দুর রহমান এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। মাড়াই শুরুর পর প্রতি বিঘায় ৩৫ মণের উপরে করে ভুট্টা তুলেছেন। বাজারে মণপ্রতি বিক্রি করছেন ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষী আব্দুল গফুর জানান, চরে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার ফলন বেশি হয়। কম খরচে বেশি লাভবান ভুট্টা। এরই মধ্যেই ভুট্টা জমি থেকে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন পাচ্ছেন ৪০ মণের বেশি। এ বছর গত বছরের তুলনায় আবাদ বেশি হয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানি গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিন জানান, চার বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আগাম ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। ভুট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম লাগে এবং ফলনও অন্য ফসলের তুলনায় বেশি। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচলক এনামুল হক জানান, আলুর চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভজনক। পরিশ্রম ও উৎপাদন খরচ কম। গত বছর প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বিঘাতে ৪০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হয়। এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ হিসাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৯ হাজার ৬৮৮ টন। এখন পর্যন্ত ভুট্টা চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় দুই মৌসুমেই ভুট্টা চাষ হয়। রবি মৌসুমে বেশি চাষ হয়। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ ভুট্টার ফলন ঘরে তোলা হয়েছে।