বগুড়ার নন্দীগ্রামে আলুর শুটকি যাচ্ছে ভারতে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার তিনটি গ্রামের দেড় শতাধিক মিষ্টির কারিগর রমজান মাসে বাড়িতেই আলুর শুঁটকি এবং তেলে ভাজা পাঁপড় তৈরি করছেন। পবিত্র মাহে রমজান মাসে হাটে-বাজারে মিষ্টি বা রস-গোল্লার তেমন একটা চাহিদা নেই, গ্রামের শত শত বাড়িতে মিষ্টির কারিগর এই মাসে মিষ্টি তৈরি বন্ধ।

তবে তারা কেউই ঘরে বসে বসে বেকার সময় পার করছেন না। আলু তোলার মৌসুমে আলুর পণ্য তৈরি। এ কাজে পরিশ্রম বেশি, অনেকে দ্বিগুণ লাভের আশায় বাড়িতেই আলু শুঁটকি করে তা মজুদ করছেন। অন্যদিকে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কেউ কেউ বাড়িতে আলু শুঁটকি করার পর ফুটন্ত তেলে ভাজা পাঁপড় নিয়ে ছুটছেন হাটে-বাজারে।

তেলের দাম বেশি, একারণে পাঁপড়ের দামটাও বেশি। হাটে-বাজারে ভাজা পাঁপড় বিক্রি কমলেও আলুর শুঁটকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ বছর যাচ্ছে ভারতে। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনছেন আলুর শুঁটকি। প্রায় তিনযুগ ধরে নন্দীগ্রাম উপজেলার কল্যাণনগর, হাটধুমা ও চাকলমা গ্রামের সনাতন ধর্মের মানুষেরা আলুর শুঁটকি ও পাঁপড়ে তাদের স্বপ্ন বুনছেন। তারা বলছেন, সরকারিভাবে ঋণ সহায়তা পেলে আলুর এই পণ্য তৈরিতে গ্রামেই গড়ে উঠতে পারে বড় কর্মসংস্থান।

কল্যাণনগরের মুক্তি মহন্ত বলেন, ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন, আমাদের গ্রামে তৈরি আলু শুঁটকি এখন ভারতে যাচ্ছে। সরকারিভাবে স্বল্পসুদে ঋণ পেলে আলু শুঁটকির ব্যবসাটা বড় করতাম। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে কার্ডিনাল আলুর পাঁপড়ের শুটকি তৈরির কাজ করছেন। আলু শুঁটকি প্রত্যেক কেজি ৮০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন।

বগুড়া, নাটোরসহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা বাড়িতে এসে আলু শুঁটকি নিচ্ছেন। গতকাল শনিবার সকালে কল্যাণনগর হিন্দুপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা মাঠে, বাড়ির ছাদে-উঠানে, রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় এবং পুকুরের পাড়ে রোদে কাটা আলু শুকানো হচ্ছে। বাড়ির বাইরে চা দোকানের পাশে মুক্তি মহন্ত টিন-শিটে তৈরি একটি যন্ত্র বড় পাতিলের মুখে বসিয়ে তার ওপর আলু ধরে হাত দিয়ে চাপছেন, আলু চিকন ফালি-ফালি হয়ে যাচ্ছে।

পাশে চুলার ওপর বড় পাতিল বসিয়ে গরম পানিতে কাটা আলু সেদ্ধ করছেন গৃহীনি। পাশের বাড়িতেও চলছে একই পরিশ্রম, মনোরঞ্জন নামের একজন সেদ্ধ আলু ঠান্ডা করে রোদে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করছেন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে আলু সেদ্ধ করার কাজ। কেউ কেউ বাড়ির ছাদে-উঠানে এবং ফাঁকা মাঠে কাপড়ে ও কাগজের ওপর কাটা আলু শুকাতে দিচ্ছেন।

রোদে শুকিয়ে আলুর ফালিগুলো কুকড়ি হয়ে শুটকি হয়ে গেলে তা বস্তায় ভরে বাড়িতে মজুদ রাখা হচ্ছে। ওই পাড়ার নয়ন মহন্ত প্রতিবছরের রমজান মাস এলেই বাড়িতে আলুর ভাজা পাঁপড় তৈরি করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করেন। তার বাড়ির উঠানে যেতেই চোখে পড়লো, রোদে আলুর ফালিগুলো শুকানোর জন্য উঠানে ছড়িয়ে রেখেছেন। বাড়ির বাইরে দরজার মুখে বারান্দায় বসিয়েছেন মাটির চুলা। নয়নের স্ত্রী পার্থনা মহন্ত চুলার ওপর কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলে আলুর পাঁপড় তৈরির কাজ করছেন।

নয়ন মহন্ত জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়িতেই চানাচুর ও চিঁড়াসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে নন্দীগ্রাম সদর, ওমরপুরসহ বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ২০ বছর তিনি এ পেশায় রয়েছেন। এ বছর চার বিঘা জমিতে স্টিক আলু চাষ করেছেন। এক মণ আলু শুকিয়ে শুটকি হয় ৮ কেজি, ভাজার জন্য ৩ কেজি পাম তেল লাগে।

খরচ বেশি হওয়ায় কিছুটা বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়, হাটে-বাজারে ভাজা পাঁপড় ২০০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি করেন। দাম বেশির কারণে ক্রেতা কম, দিনে ৫-৬ কেজি বিক্রি হয়। প্রতিকেজিতে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা লাভ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *