‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে টানাটানি!

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

‘রুচির দুর্ভিক্ষ’র কথাটা প্রথম বলেছিলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সেই ৭০’র দশকের দিকে। তার কথায়, ‘এখন তো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোনো ছবি হয় না।’ শিল্পাচার্যের সেই উক্তিটি নতুন করে উঠে এসেছে কিংবদন্তি অভিনেতা ও নাট্যজন মামুনুর রশীদের কথায়।

তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে গেছি। সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে। যে উত্থান কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এই উত্থান কীভাবে রোধ করা যাবে, এটা যেমন রাজনৈতিক সমস্যা, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিক সমস্যাও।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন হিরো আলমও। এক লাইভে এসে তিনি নাট্যজন মামুনুর রশীদ উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ। সততা ও সৎসাহসই আমার একমাত্র সম্বল। আমাকে নিয়ে যাদের রুচি হয় না, সেই রুচিবান লোকেরা হিরো আলমকে তৈরি করেননি। এ জন্য রুচিবানেরা বাংলাদেশে রুচি আনতে চাইলে হিরো আলমকে মেরে ফেলেন।’ শুধু তাই না লাইভে হিরো আলম ‘আত্মহত্যার’ কথাও জানান। আর জন্য দায়ী হবে এদেশের মানুষজন!

এই ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে গেল ক’দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যাকে কেন্দ্র করে হয়েছে অনুষ্ঠানও। আর একের পর এক সংবাদ তো হচ্ছেই। মামুনুর রশীদের মন্তব্য ঘিরে আলাচনা-সমালোচনার মধ্যেই তার পাশে দাঁড়িয়েছে অনেক তারকা শিল্পী। এ নিয়ে ফেসবুকে নানা স্ট্যাটাসও দিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার নাট্যকেন্দ্রিক সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ থেকেও এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে তারা একাগ্রতা প্রকাশ করেছেন গুণী এই মানুষটির কথার সঙ্গে।

‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার স্বাধীনতা পেয়ে অনেকে দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। আবার এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে বেরিয়ে আসছে অনেক কুরুচিপূর্ণ কথা ও ছবিও। যদি এখনই ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’র লাগাম টানা না হয়, তাহলে হয়তো সামনে অনেক হতভম্ব হওয়ার বিষয় চলে আসতেই পারে। যার কিছুটা ইঙ্গিত হলেও ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে ফেসবুকে।

আজ বৃহস্পতিবার নাট্যজন মামুনুর রশীদের কথার প্রসঙ্গ টেনে অন্যদের মতো একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু। তার কথায়, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ কি সুন্দর, সময়োপযোগী, অর্থবহ শব্দের উপস্থাপন! এই শব্দ দুটি যিনি ব্যবহার করার ক্ষমতা এবং মানুষিক দক্ষতা রাখেন, তার সমালোচনা করার যোগ্যতা কি আমার-আপনার আছে?

মিতুর এই কথার উত্তর দিতে গিয়ে মনে হলো রেগে গেছেন সফল নির্মাতা মালেক আফসারী! তিনি মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘চিড়িয়াখানায় গিয়ে কেউ বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি নেয়, কেউ বানরের খাঁচায়। এখানে রুচির প্রশ্ন তুলে নিজেকে জাহির করা বোকামি। কারণ, সোস্যাল মিডিয়া একটি চিড়িয়াখানা।’

নির্মাতার এমন কথার উত্তরে এই নায়িকা লিখেছেন, ‘চলেন টিকিট কেটে একদিন বানর দেখে আসি।’ নায়িকার এমন উত্তর হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিলেন মালেক আফসারী। তার শেষ কথা ছিল, ‘হাহাহাহা যাব ঈদের পর।’

জাহারা মিতুর এই পোস্টের নিচেই উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধরও লিখেছেন কিছু কথা। এই লেখিকা প্রশ্ন রেছেন, ঊনার রুচিবোধ নিয়ে কে কথা বলবে?

এ ছাড়া চিত্রনায়ক ওমর সানী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামুনুর রশীদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘শুধু আলমের নাম নিলেন বড় ভাই। এ রকম তো সংগীতে আছে, অভিনয়ে আছে, কলাতে আছে, লেখনিতে আছে, রাজনীতির মঞ্চে আছে, ওনাদের নাম নিতে ভয় লাগে। শুধু পাইছেন মাটির গন্ধওয়ালা হিরো আলমকে। আর ওনারা আতর মাখে তাই নাম নেন নাই বড় ভাই।’

‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ কথা লিখে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সার্চ দিলে এখন অনেক ঘটনা-অঘটনা সামনে চলে আসবে। তাই বিষয়টি নিয়ে টানাটানি না করাই ভালো। আর নয়তো হতে পারে উল্টোটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *