ধারে চলছে ৭৪ শতাংশ নিম্নআয়ের পরিবার

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

গত ৬ মাসে নিম্ন আয়ের পরিবারপ্রতি ব্যয় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে; কিন্তু এ সময় তাদের আয় বাড়েনি। মূল্যস্ফীতির চাপে প্রায় ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। গতকাল বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) প্রকাশিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?’ শীর্ষক এ জরিপের ফলে বলা হয়- পরিবারের ব্যয় বাড়ার এই হিসাবে গ্রাম এলাকায় বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

জরিপের বিষয়ে সানেম বলছে, বেড়ে যাওয়া খরচের প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিভিন্নভাবে সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে। এ সময় খাদ্যে খরচ বেড়েছে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া শহর অঞ্চলে এ খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

সানেমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈশ্বিক ও জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যয় বৃদ্ধি, যাতায়াতের বর্ধিত খরচ ইত্যাদি বিষয় নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্দশা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে স্বল্প আয়ের পরিবার বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছে।

এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষ কীভাবে মোকাবিলা করছেন এবং সামনের দিনগুলোর বিষয়ে তাদের ভাবনা কী, তা বিশদভাবে বোঝার জন্য সানেম নিম্ন আয়ের থানাগুলোর ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ২০২৩ সালের ৯ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে ১৬০০ থানার নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আটটি বিভাগীয় জেলা- ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

জরিপের ফল উপস্থাপন করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যয় বাড়ার বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করছেন- এমন প্রশ্ন রাখা হয় সাধারণ মানুষদের কাছে। জবাবে ৯০ দশমিক ২ শতাংশ বলেছে, তারা তাদের খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন এনেছে। ধার করে চলছে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছে- তারা নন-ফুড আইটেমের খরচ কমিয়ে এনেছে। সঞ্চয় করার সুযোগ কমিয়ে এনেছে ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ওভারটাইম কাজ করছে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তাদের সঞ্চয় যা ছিল তা থেকে অতিরিক্ত খরচ করছে।

তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ এমনিতেই কম। তার ওপর তাদের এ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। অন্যদিকে শহর ও গ্রামের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্য পরিবর্তন করেছে ৯৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। গ্রামে সেটা ৮৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ধার করে চলছে শহরের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামেও এই হার একই।

সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। যেমন- ছয় মাস আগেও যেসব পরিবারে মাসে ৪ বার মুরগি খেত, এখন তারা ২ বার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।

খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবায়ও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জরিপের তথ্য বলছে, শহরের নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য কিনতে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের পরিবারগুলো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ কমিয়েছে বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *