পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাস থেকে দূরে গেন্ডারিয়া এলাকার স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎধীন আছেন। ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আহত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার রাত ১০টায় গেন্ডারিয়ার মুরগিটোলা মোড় এলাকায় প্রথম দফায় ও রাত ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। তখন এক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুজনকে আটক করে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে রাত ১১ টার দিকে আবু সুফিয়ান ও শিহাব নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় মুরগিটোলা মোড়ে চা খেতে গেলে হঠাৎ ৫০ থেকে ৬০ জন স্থানীয় কিশোর গ্যাং এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পরে ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় তারা। এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশে অবস্থান করা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে তাদের উপরও আক্রমণ করে স্থানীয় কিশোর গ্যাং। এতে অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুরুতর আহত সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি চা খাওয়ার জন্য আমার বন্ধুর সঙ্গে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের আটকিয়ে কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করে। আমি বানিয়ানগর থাকি বলতেই আমাদের ওপর অনেকগুলো ছেলে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরিহিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে আর মারতে থাকে। আমরা আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’
তবে ঘটনার সময় পুলিশের নিরব ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালেও ঘটনাস্থলে ১০ এর অধিক পুলিশ অবস্থান করলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
হামলার শিকার শিহাব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মারধর করার পর পুলিশ এসে থামায়। কিন্তু বলতে থাকে তোরা জগন্নাথের স্টুডেন্ট এখানে আসছিস কেনো? এই কথা বলেই পুলিশ আমাকে মারতে থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর আহতদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর সুত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া দুই থানার ওসির সঙ্গেই কথা বলেছি। থানায় অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। আর পুলিশ যে শিক্ষার্থীদের উপর হাত তুলেছে সেই ভিডিওটিও ওসিকে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘এটা সূত্রাপুর থানার অধীনে। তবে ঘটনার সময় সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিল। তারা মারামারি থামিয়ে দিয়েছে। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তবে এ ঘটনায় আমাদের এখানে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় ভিকটিম এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা ভিকটিম আসলে জানতে পারবো। আর যে দুজনকে আটক করা হয়েছিল তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাই তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’