দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও হজযাত্রীর নির্ধারিত কোটা পূরণ করা যাচ্ছে না। সৌদি আরবের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী এই বছর হজযাত্রীর নির্ধারিত কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট এক লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৮৯২ জন। বেসরকারিভাবে এক লাখ ৭ হাজার ৪৭০ জন। অর্থাৎ কোটাপূরণে ৯ হাজার ৮৩৬ জন হজযাত্রীর নিবন্ধন বাকি আছে। এ কারণে, ষষ্ঠবারের মতো হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ৩০ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গতকাল সোমবার নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। নিবন্ধনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক উন্মুক্ত রয়েছে এবং উভয় ব্যবস্থাপনায় নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন করে হজে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, দুই বছর আগেই প্রাক-নিবন্ধন করেছেন হজে যেতে আগ্রহীরা। তবে এবার যে ব্যয় নির্ধারণ (প্যাকেজ) করা হয়েছে, তাতে অনেকেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। হজে আগ্রহীরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি হজ প্যাকেজে প্রায় সাত লাখ টাকার মতো খরচ ধরা হলেও পশু কোরবানি ও খাবারের খরচসহ মোট ৮ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা লেগে যাবে। দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন হজে গিয়ে এ পরিমাণ টাকা ব্যয় করলে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য হিমশিম খেতে হবে।
হজের এমন খরচ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অস্বাভাবিক বিমান ভাড়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাওলানা ইয়াকুব শরাফাতি আমাদের সময়কে বলেন, ‘যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাড়া বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আমরা তৃতীয় পক্ষ এভিয়েশন টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছি।’ তবে নিবন্ধনের সময় বাড়ানোয় কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি।
চলতি বছর হজে যেতে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। তবে কোটার বিপরীতে খুবই কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হন। পরে নিবন্ধনের সময় ৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই সময়েও কোটার অর্ধেকেরও কম হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়। সর্বশেষ নিবন্ধনের সময় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যেও সাড়া পাওয়া যায়নি। শেষে নিবন্ধনের সময় ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সবশেষ হজের খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানোর সঙ্গে নিবন্ধনের সময় ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেও সাড়া মেলেনি হজযাত্রীদের।
গত বছর সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ হয়। প্যাকেজ ১-এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮ টাকা, প্যাকেজ ২-এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা। বেসরকারিভাবে হজ পালনে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা।
খরচ কমানোর সময় ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেহেতু মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেহেতু সরকারি প্যাকেজ মূল্য ৪১৩ সৌদি রিয়াল সমপরিমাণ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বর্তমান হজ প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে (৬,৮৩,০১৫- ১১,৭২৫) ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলো।
হজ এজেন্সিজগুলোও মিনার তাঁবু ‘সি’ ক্যাটাগরি ধরে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে, তাই বেসরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে (৬,৭২,৬১৮-১১,৭২৫) ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে সৌদি আরবে সেবামূল্য কমানোর কারণে চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজ পালনে খরচ ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।