দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনের এক সমাবেশ থেকে আত্মপ্রকাশ করে ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটি। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে সংগঠনটির নামকরণ হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ কারণেই দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নাম। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বোধ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নানা চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দলটি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসীন রয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্ণিল আয়োজনে এবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনকে বর্ণিল করতে গত কয়েক দিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় ও উপ-কমিটির সদস্যরা কাজ করে আসছেন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগও।
ভাষা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মুসলিম লীগবিরোধী ২১ দফা প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন, ’৫৪-এর নির্বাচনে বিজয় ও মুসলিম লীগের ভরাডুবি প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে ’৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ববাংলার রাজনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য এবং অব্যাহত স্বৈরশাসন ক্রমশ বাঙালি জাতির মোহমুক্তি ঘটায়। সামপ্রদায়িক ভাবধারার আচ্ছন্নতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে আত্মসম্বিৎ ফিরে পায় বাঙালি জাতি। এরই পটভূমিকায় বাঙালি জাতীয়তাবোধের স্ফূরণ, বিকাশ ও বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিরাষ্ট্রের ধারণাকে জনচিত্তে প্রোথিত করা এবং অপ্রতিরোধ্য করে তোলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ পালন করে নিয়ামক ভূমিকা। ’৬০-এর দশকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ৬ দফা দাবি হয়ে ওঠে স্বাধিকার আন্দোলনের ম্যাগনাকার্টা, পূর্ণ স্বাধীনতাই যার যৌক্তিক পরিণতি। ৬ দফাভিত্তিক ছাত্র সমাজের ১১ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সৃষ্ট ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ৬ দফার পক্ষে গণরায় এবং আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দেয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পালন করে যুগান্তকারী ভূমিকা। আওয়ামী লীগ আত্মপ্রকাশ করে কেবল পূর্ব বাংলার নয়, পাকিস্তানেরও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে। স্বাধীনতার আন্দোলনে দলটি পালন করে অগ্রণী ভূমিকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। শুরু করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের দুরূহ কর্মযজ্ঞ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ক্ষত মুছে বাংলাদেশকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল করেন। স্বল্পতম সময়ে ভারত থেকে স্বদেশে প্রত্যাগত এক কোটি শরণার্থী এবং গ্রাম ও ভিটেমাটি ছাড়া প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়ানো দুই কোটি অভ্যন্তরীণ ভাসমান উদ্বাস্তুকে তিনি নিজ নিজ গ্রামে সগৃহে পুনর্বাসিত করেন। তিন লক্ষাধিক নির্যাতিত নারীর সম্মানজনক পুনর্বাসনের কাজও সম্পন্ন করেন। নতুন সংবিধানের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় স্বৈরশাসনের ধারা। এরপর থেকে দেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে দলটি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন। গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে শুরু হয় তার আপসহীন সংগ্রাম। দেশে ফেরার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার পরিচালনার দায়িত্বগ্রহণ করে আওয়ামী লীগ।
কর্মসূচি: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন ওড়ানো। বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশিষ্টজনরা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৬৬ বছরপূর্তিতে সব কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কর্মসূচি: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন ওড়ানো। বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশিষ্টজনরা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ৬৬ বছরপূর্তিতে সব কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব জেলা, উপজেলাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।