গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ঈদের পর সরকারের বিরুদ্ধে আবারো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু এই বন্দুকই আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। অতীতেও কোনো শাসক বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বর্তমান সরকারও পারবে না। সময় থাকতে আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অবৈধ সরকার বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে। ঈদের পর আমরা আন্দোলন শুরু করব। সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে, আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে বন্দুকের জোরে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। এই বন্দুকই একদিন আপনাদের কাল হবে। অনেক বড় শাস্তি ও কঠিন প্রায়শ্চিত্ত আপনাদের করতে হবে। তাই সময় থাকতে সাবধান হোন। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে লেডিস কাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে এলডিপি। জোটের শীর্ষ নেতারা এতে অংশ নেন।
ইফতারের আগে খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন টেবিলে গিয়ে শরিকদলের নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করেন। পরে বাংলাদেশসহ মুসল্লিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। কারণ দেশে কোনো বৈধ সরকার নেই। যতই দিন যাচ্ছে, দেশে গুম-খুন ও অত্যাচার বাড়ছে। আগে রাজনীতিবিদরা গুম হতেন। এখন ব্যবসায়ীসহ সাংবাদিকরাও বাদ যাচ্ছেন না।
গুম-খুনের সাথে সরকারি দলের গুণ্ডাবাহিনী ও র্যাব-পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, চলমান গুম-খুনের সাথে র্যাব জড়িত। তারা অসংখ্য মানুষ গুম করে হত্যা করেছে। যত দিন র্যাব থাকবে, দেশে গুম-খুন বন্ধ হবে না। তারা এখন সিরিয়াল কিলারের মতো টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা করছে। র্যাব জনগণের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে আবারো এই সংস্থাটির বিলুপ্তির দাবি জানান খালেদা জিয়া।
ঈদের পর আন্দোলনে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, সাম্যবাদী দল যোগ দিয়েছে। আরো অনেকে যোগাযোগ করেছে এই জোটে যোগ দিতে। আমি বলব, ছোট-বড়, বাম-ডান না দেখে এখন সব দলকে একই কাতারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জালেম সরকারের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশবাসী তাকিয়ে আছে শান্তির জন্য। তারা শান্তি চায়। কর্মসংস্থান চায়। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ চায়।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে যারা মতায় আছে তারা জোর করে বিনাভোটে নির্বাচিত। সে কারণে আওয়ামী লীগ নিজেদের লোকদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তিনি বলেন, পবিত্র এই রমজান মাসে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। আসুন আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন এই জালেম অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে রা করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ঈদের পর আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমাদের বিশ্বাস সেই আন্দোলন কর্মসূচিতে সরকারের বিদায় নিশ্চিত হবে।
ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সাথে এক টেবিলে ছিলেন এলডিপির ড. কর্নেল অলি আহমদ, রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টির মহাসচিব (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ডা: রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, খেলাফত মজলিসের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, আলমগীর মজুমদার, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এলডিপির মামদুদুর রহমান চৌধুরী, আবদুল করীম আব্বাসী, প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন মুস্তফা, খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে ড. আর এ গণি, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল হালিম, বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান, হারুনুর রশীদ, ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল, শিরিন সুলতানা, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর খান, রফিক শিকদার, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।