ঢাকা : দল হিসেবে রাজনীতিতে নিষিদ্ধের আশঙ্কা, বিএনপির সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের দীর্ঘ কারাবাস এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া, এসব কারণে চরমভাবে হতাশ জামায়াত-শিবিরের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আর হতাশার সেই প্রভাব দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও এসে পড়ছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
জানা যায়, দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া, সাংগঠনিক শক্তি অর্জন এবং দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক কর্মসূচি দেওয়া হলেও সেসব কর্মসূচি সফলে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের থেকে তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, শুধুমাত্র জামায়াতের নেতাকর্মীরাই নয়। দলটির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝেও এ হতাশা বিরাজ করছে। ফলে কর্মসূচি পালনে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে। আর সে কারণেই সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছে সূত্র।
দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ জামায়াতের সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে ৮ জুন (সোমবার) বিক্ষোভ কর্মসূচি,১২ জুন (শুক্রবার) দোয়া দিবস, ১৩ জুন ( শনিবার) বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ১৭ জুন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৮ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি পালন করে দলটি।
দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে নানা নামে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এসব কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
দলের কর্মসূচি পালনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে অনাগ্রহের কারণ সম্পর্কে দলটির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনে আটঘাট বেঁধে নামলেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসা, নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলা ও প্রশাসনিক হয়রানি এই অনাগ্রহের মূল কারণ।
তাছাড়া কর্মসূচিগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকার কারণে ধীরে ধীরে ঘোষিত কর্মসূচি পালনে অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এমনটাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর মজলিসে শুরার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছে কথাটির সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। তবে প্রশাসনিক ঝামেলার কারণে অনেকেই এখন কৌশলী হয়েছেন।
কৌশলের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের পদ রাখতে যতটুকু না করলেই নয় শুধুমাত্র ততটুকুই করছেন নেতারা। আগের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সেই আগ্রহ নেই। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে তা অনেকটাই অনুপস্থিত।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ। আপিলে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার প্রতিবাদে সারাদেশে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি।