নানা বিতর্কের পরও ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ করেই দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের স্বর্ণালঙ্কারের দোকান উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গত বুধবার রাতে আরাভ খানকে সঙ্গে নিয়ে তার জুয়েলারি দোকানটি উদ্বোধন করেন তিনি।
এরপরই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানের আমন্ত্রণে দুবাইয়ে যাওয়া নিয়ে তুমুল সমালোচিত হয় সাকিব। যদিও এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান এই ক্রিকেটার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই ঢাকঢোল পিটিয়ে তড়িঘড়ি করে দোকানটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে যারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ৫০ হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা) সম্মানি দেওয়া হয়েছে।
হিরো আলমসহ অন্যদের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। তারা পরিস্থিতি বুঝে টাকা না নিয়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠান সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দোকানের অংশীদার উসমান বলেন, ‘সাকিবকে দেওয়ার পুরো টাকাও ছিল না। অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ হাজার দিরহাম ধার করতে হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে কিছু ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা প্রবাসী এক টেলিভিশন সাংবাদিককেও টাকা পরিশোধ করেননি আরাভ।’
আরাভ খানকে নিয়ে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, দোকানটির মালিক ভারতীয় পাসপোর্টধারী আরাভ খান আসলে বাংলাদেশের রবিউল ইসলাম। যিনি রাজধানীর বনানীতে পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি।
আরও ছদ্মনামের মতো তার নামে রয়েছে আরও কয়েকটি মামলায় পরোয়ানা। তিনি নিজেকে বড় ব্যবসায়ী দাবি করলেও দুবাইয়ে তার পরিচিতরা বলছেন, এর সবই গল্প, ফাঁকি। আলোচিত ওই স্বর্ণের দোকানে অন্যরাও বিনিয়োগ করেছেন। যেসব ফ্ল্যাট নিজের বলে দাবি করেছেন, সেগুলোও অন্যের। অর্থ ধার করেছেন কয়েকজনের কাছ থেকে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকের ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের দোকানটি খোলা হয়নি। গত রোববার দোকানটি খোলা ছিল। আরাভকে সেখান দেখাও গিয়েছিল। তবে সোমবার তিনি আসেননি। ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা দোকানটির আয়তন মাত্র ৪০০ বর্গফুট। এক বছরের জন্য আরাভ দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৭০ দিরহাম।
ভাড়া হিসেবে এক বছরে পরিশোধ করতে হবে ২৮ হাজার দিরহাম (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা)। আরাভ খান টাকা নিয়ে আরও চারজনকে দোকানটির ব্যবসায়িক অংশীদার করেছেন। তারা হলেন- দোকানের তত্ত্বাবধায়ক উসমান গণি, দুবাইপ্রবাসী কুমিল্লার শাহেদ আহমেদ, ঢাকার দোহারের রাফসান জামি ও শাকিব হোসেন। তারা সবাই মিলে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন আরাভকে।
এ বিষয়ে রাফসান জামি বলেন, ‘বড় অংশের মালিক আরাভ ভাই হলেও আমাদের চারজনকে ওয়ার্কিং পার্টনার করে টাকা নিয়েছেন। দোকানে আমাদেরও বিনিয়োগ রয়েছে। আমেরিকাসহ অন্য শহরের দোকান শুধু ওনার (আরাভ) নিজের। এ দোকান আমাদের দিয়ে দেবেন।’
কী পরিমাণ বিনিয়োগ আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাত মাস আগে দুবাই এসেছি। বাড়ি থেকে আমরা সবাই ব্যবসার কথা বলে অনেক টাকা এনেছি।’
তবে গত রোববার দোকানে অন্য কারও বিনিয়োগ আছে কি না, জানতে চাইলে আরাভ বলেন, ‘নিজের টাকাই তো রাখতে পারি না। অন্যের টাকা দিয়ে কী করব।’
দুবাইয়ের পুরোনো এবং নিউ গোল্ড সুক এলাকায় বাংলাদেশিদের ১৪টি সোনার দোকান রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীর প্রায় সবার কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়েছেন আরাভ। নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও তার ধারের পরিমাণ ৫০০ দিরহাম থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার দিরহাম।
এনআরআই জুয়েলার্সের মালিক রাসেল (যার দোকানে ইগল রেখে ছবি তোলা হয়েছে) বলেন, ‘পরিচয়ের পর থেকে আমার কাছ থেকে এক বছরে চার-পাঁচবার ধার নিয়েছে। প্রথম প্রথম ৫০০, ১ হাজার দিরহাম ধার নিয়ে ফেরত দিয়েছেন। সম্প্রতি বড় অঙ্কের ধার নিয়েছেন। এখন আর ফোনে তাকে পাচ্ছি না। তার আশপাশের লোকজনও ফোন ধরে না। হয়তো আরও অনেকে টাকা পাবেন।’
আরেক দুবাইপ্রবাসী তপন হাওলাদার বলেন, ‘আরাভের সঙ্গে পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। ওর মিষ্টি ব্যবহার আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমিও কিছু ব্যবসার আশায় তার সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু সে মাঝেমধ্যে অল্প দিরহাম ধার নিত। কয়েকবার ফেরতও দিয়েছে। তখনই আমার সন্দেহ হয়, বড়লোক হলে ধার লাগবে কেন?’
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দিয়ে দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকানের শোরুম উদ্বোধন করা হবে- এই ঘোষণার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন আরাভ খান।