স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর: অনিয়ম যখন নিয়ম হয়ে যায় তখন নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। এমনি অবস্থা গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে। শিক্ষক বদলী, বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার, সরকারী কর্মচারী হয়েও আদালতের স্থিতাবস্থা নিয়ে একই কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় চাকুরী করা সহ নানা অনৈতিক অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে এই জেলায়। এই সকল বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এই বিভাগে।
অনুসন্ধান বলছে, শিক্ষক এমনকি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের পক্ষে বেনামে দরখাস্ত দিয়ে গাজীপুর প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরের নানা দূর্নীতর তথ্য বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে সুশৃঙ্খল এই শিক্ষা বিভাগে আভ্যন্তরীন চাপা ক্ষোভ বড় ধরণের সমস্যা তৈরী করতে পারে।
সূত্রমতে, গাজীপুর সদর উপজেলায় ১৬৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলী নিয়ে প্রায়ই কথা উঠে। অনলাইন বদলীর ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে একান্তে যোগাযোগ না করায় অনেক বদলী সরকারী প্রজ্ঞাপন লংঘন করছে। শেষের বদলীর আদেশ আগে কার্যকর হয় আর আগের বদলী দিনের পর দিন পেন্ডিং পড়ে থাকে। আবার অনেক বদলীর আবেদন যোগাযোগের অভাবে বাতিলও হয়ে যায়। বদলীর আবেদন বাতিল হওয়া এমন একজন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গিয়ে বক্তব্য আনা যায় নি। প্রশ্ন করার সাথে সাথে অঝোরের কান্না না থামায় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে কান্নার মধ্য দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মানষিক নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এটা সত্য। অনলাইন বদলিতে সূক্ষ কারসাজি সহ না-না অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে।
গাজীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ এর অনিয়ম-দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অভিযোগ এর শেষ নেই। শ্লিপের টাকা, ভর্তি ফি সহ অনলাইন বদলিতে ও সূক্ষè কার সাজির অভিযোগ উঠেছে এই অফিসার এর বিরুদ্ধে। অনলাইনে বদলি হতে হলে এই অফিসারের সাথে যোগাযোগ না করলে অবেদন বাতিল হওয়ার অভিযোগ ও আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,সম্প্রতি অনলাইন বদলি দ্বিতীয় পর্বে কামারিয়া স্কুলের এক শিক্ষক কে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বদলি করেছেন আতুরি স্কুলে। আবেদন যাচাই-বাছাই সহ কোনো নিয়ম-ই প্রযোজ্য হয়নি ওই শিক্ষক এর বেলায়। গত ২৭/০১/২৩ ইং পর্যন্ত এক স্কুলে ৫ জন শিক্ষক রেখে বদলির নিয়ম থাকলেও গত ২৫/০১/২৩ তারিখে ওই শিক্ষক কে কামারিয়া থেকে রিলিজ করেছে প্রধান শিক্ষক সহ ৪ জন শিক্ষক রেখে। এখানে উল্লেখ্য যে, কামারিয়া থেকে প্রথম পর্বে একজন শিক্ষক প্রতিস্থাপন বদলির অনুমতি পেয়েছিলেন কিন্তু উনাকে বদলি না করে দ্বিতীয় পর্বের একজন শিক্ষক কে বদলি করা হয়। কামারিয়ার প্রধান শিক্ষক এর বদলির আবেদন যোগাযোগ না করায় বাতিল করেছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। পরবর্তীতে উপর মহলে যোগাযোগ করে ওই প্রধান শিক্ষক বদলির অনুমতি পেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক এর একটি কথা “আমরা অতিষ্ঠ উনার অন্যায় আবদারে। উনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বললেই হয়রানির শিকার হতে হয় যা অতীতে হয়েছে”। সুতরাং বিভিন্ন স্কুলে শ্লিপ অনুদান ও সংস্কারের টাকা কি ভাবে খরচ হচ্ছে তার অবস্থা খুবই নাজুক। সরকারী টাকার কতটুকু কাজ হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ বরাবরের মতই থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কেউ মুখও খুলছে না ভয় ও হয়রানীর ভয়ে।
খবর নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম আহম্মেদ তার পূর্বের অনেক কর্মস্থলে ঝামেলা করে এসেছেন। মারামারি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র এমনকি বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করার সময় নির্ধারিত দোকান থেকে ক্রয় করারও গোপন নির্দেশনা থাকে। শামীম আহম্মেদ গাজীপুরে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে ৭জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নাম ব্যবহার করে একটি অভিযোগ অধিদপÍরে যায়। সেই অভিযোগ তদন্তের জন্য আসলে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা অস্বীকার করে ফেলায় তদন্তই হয়নি। বই কলেংকারী সহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে শামীম আহম্মেদকে বদলী করা হলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আপিল করে বদলী আদেশের উপর স্থিতাবস্থা দেয়া হয়। ফলে বহাল তবিয়তে কর্মস্থলে আছেন শামীম আহম্মেদ।
এ সকল বিষয়ে শামীম আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, আমি এক টাকাও অবৈধভাবে উপার্জন করি না। আমার কোন বাড়ি গাড়ি নেই, হোন্ডায় চড়ে কাজ করি। দেশে বিদেশে টাকাও নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোফাজ্জল হোসেন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। শামীম সাহেবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের তদন্ত পেলেও অভিযোগকাররাী স্বীকার না করায় তদন্ত করিনি।
চলবে—-