ধর্ষণ মামলার বাদীকে ভরণপোষণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং তাকে বিয়ে করার শর্তে পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খন্দকার আজিজুল হক আরজুকে জামিন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সামছুন্নাহার এ জামিন মঞ্জুর করেন।
আজ অ্যাডভোকেট ডি এম সাইফুল ইসলাম জামিন আবেদনের শুনানি করেন। এর আগে গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআই’র পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
গত ১৬ জানুযারি একই আদালত পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আরজু। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ডিসেম্বর ২০০০ সালে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বাদী তখন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন, এ সময় তিনি রাজধানীর বড় মগবাজার একটি ভাড়া বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। তখন বাদীর আত্মীয়-স্বজনরা তাকে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একপর্যায়ে সফল হন।
আসামি বাদীকে জানান যে, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন এবং বাদীর প্রথম পক্ষের ছেলে সন্তানকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলেন। বাদী সামাজিক নির্ভরতার জন্য এবং একাকীকত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরু করার মাধ্যমে আসামি মনে-প্রাণে ভালোবেসে ফেলেন এবং আসামির বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
পরে আসামির ইচ্ছানুযায়ী, গত ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামি তার পরিচিত কাজী নিয়ে বাদীর বড় মগবাজার ভাড়া বাসায় উপস্থিত হন। সেখানে বাদী তার চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিরত তাদের বিয়ে হয়। এরপর আসামি বাদীর সঙ্গে মগবাজারের ভাড়া বাসায় এবং পরবর্তী সময়ে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদী হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় দাম্পত্য জীবনযাপন শুরু করেন। দাম্পত্য জীবনে বাদীর গর্ভে আসামির ঔরসে ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে।
সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলচাতুরির মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদীর দৃঢ়তায় বাচ্চা নষ্ট করতে পারেননি তিনি। বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণের পরিবর্তণের লক্ষ্য করেন বাদী। এরপর তার বাসায় আসা কমিয়ে দেন আসামি।
ইতোমধ্যে বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে বাদীর বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকা এবং বাদীর জমা করা ৮ লাখ টাকা, ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে বিক্রি করে আসামিকে টাকা দেন। তবুও বাদীকে কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেননি এবং কোনো প্রকার টাকাও ফেরৎ দেননি আসামি।
একপর্যায়ে বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন আসামি। পরে খোঁজ নিয়ে বাদী জানতে পারেন, আসামির প্রথমপক্ষের স্ত্রী জীবিত। সে ঘরে তার কন্যাসন্তান আছে এবং আসামি তার প্রথমপক্ষের স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন। বাদী আরও জানতে পারেন যে, আসামি ইতোপূর্বে বাদীর কাছে ফারুক হোসেন হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিদুল হক আরজু।
মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে বাদীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা বাদীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে আসামি বাদীর সঙ্গে বিয়ে ও তার গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃ পরিচয়কেই সরাসরি অস্বীকার করেন।
মামলার তদন্তে বাদী কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে কন্যা সন্তানটি বাদীর গর্ভজাত সন্তান এবং আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা মর্মে মতামত এসেছে।